পরিকল্পিত শহর গড়তে পূর্বাচলকে বেছে নেয় রাজউক। আবেদনকারীদের মধ্যে লটারি করে প্লট বরাদ্দ দেয় সংস্থাটি। তবে সবার জন্যই একই পদ্ধতি নয়। সরকারি সিদ্ধান্তে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে প্লট বরাদ্দ দিতে আইনে একটি ধারা যোগ করা হয়। এই ধারা ব্যবহার করে নানা সময়ে যাকে-তাকে দেয়া হয়েছে পূর্বাচলের প্লট। এমনকি এই তালিকায় ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ৫ সদস্যও। প্রত্যেকের নামে বরাদ্দ দেয়া হয় দশ কাঠা করে মোট ছয়টি প্লট।
রাজউকের তৃতীয় মডিফেকেশন ম্যাপে সামাজিক অবকাঠামোর জন্য জায়গাটি বরাদ্দ ছিলো। তবে ২০১২ সালে চতুর্থ মডিফিকেশনে সেখানে প্লট তৈরি করা হয়। বালু নদীর পাড়ে পূর্বাচল প্রকল্পের ডিপ্লোমেটিক জোনের ২৭ নম্বর সেক্টরে ২০৩ নম্বর রোডের একটি প্লট শেখ হাসিনাকে বরাদ্দ দেয়া হয়। পাশেই শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির প্লট। পরের প্লটটি নেন শেখ রেহানা। পরের দু’টি প্লট শেখ হাসিনার দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুুলের। সবশেষ প্লটটি বরাদ্দ দেয়া হয় শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নামে।
কাঠা প্রতি ৩ লাখ টাকা হিসেবে প্রতিটি প্লটের মূল্য নির্ধারণ করা হয় মাত্র ৩০ লাখ টাকা। ৬০ কাঠার মোট মূল্য এক কোটি ৮০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা। বরাদ্দ দেয়ার পরপরই প্রাচীর দিয়ে পুরো ৬০ কাঠা প্লটের চারপাশ ঘিরে ফেলা হয়। এসবের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলো আনসার সদস্যরা। সরকার পতনের পর নিরাপত্তা উঠে গেলে দুর্বৃত্তরা প্রাচীরের মূল ফটক ভেঙে ফেলে।
২০২২ সালের ৩ আগস্ট প্লটগুলোর বরাদ্দপত্র ইস্যু করে রাজউক। সেই সময় সংস্থাটির চেয়ারম্যান ছিলেন আনিসুর রহমান। পুরো প্রক্রিয়াটি সরকারের আদেশে হয়েছে বলে দাবি তার। তিনি বলেন, সরকারের চিঠি অনুযায়ী রাজউক কাজ করেছে। এ বিষয়ে মৌখিকভাবে কোনো আদেশ দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে পূর্বাচলের প্রকল্প পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, মাস্টারপ্ল্যান না মেনে প্লট করা হয়েছে। বিগত সরকারকে সুবিধা দিতেই এসব করা হয়েছে। এতে সবার যোগসাজশ ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর আদিলুর রহমান জানান, ডিপ্লোম্যাটিক জোনে শেখ পরিবারের জন্য প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ম্যাপ দেখে বোঝা যায় এটি একটি সবুজ এলাকা ছিলো। এটিকে নষ্ট করে এই প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিনা তদন্ত করে দেখা দরকার।ব্যক্তিবিশেষের জন্য নগরায়ণের পরিকল্পনা পরিবর্তন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মূলত, রাজউকের ১৩/এ ধারায় পূর্বাচলে নানা সময়ে বিভিন্ন জনকে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। এই ধারাটিরই যথেচ্ছ ব্যবহার করে রাজউক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এভাবে প্লট বরাদ্দ বন্ধ হওয়া উচিৎ বলে মনে করে টিআইবি। টিআইবির পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান জানান, আমরা এই পুরো প্রকল্প বাতিল করার দাবি জানাই। এ সময় রাজউকের ১৩/এ ধারা বাতিলেরও দাবি জানান তিনি।
রাজউক জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২৮৫ জনকে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। এরমধ্যে ১৪৯টিই বরাদ্দ পান তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি, দলীয় নেতাকর্মী ও উচ্চ পর্যায়ের আমলারা। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) পূর্বাচলে শেখ হাসিনা পরিবারের নামে বরাদ্দ ৬০ কাঠা জমির বরাদ্দ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিটও করা হয়েছে।