লাল-সবুজের প্রতি ছিল তার আজন্ম ভালোবাসা। তার কাছে, পতাকা মানে দেশ, সম্মিলিত বাংলাদেশ। ঘর থেকে শেষবারের মতো বের হওয়ার আগে বাবার কাছ থেকে ৩০ টাকা নেন তিনি। সেই টাকায় কেনা জাতীয় পতাকা মাথায় বেঁধে নামেন রাজপথে। এরপরই যেন এক আবেগঘন গল্প! এক রিকশার পাদানিতে ঝুলে ছিল যুবক নাফিজের নিথর দেহ। মুহূর্তটি কীভাবে ধরা পড়েছিল এক চিত্রসাংবাদিকের ক্যামেরায়; আর কীভাবেই বা পরিবার পেয়েছিল প্রিয় সন্তানের খোঁজ?
গত ৪ আগস্ট উত্তাল ছিল পুরো দেশ। রাজপথ ছিল যেন বধ্যভূমি। কমে আসছিল বাঁচা-মরার দূরত্ব। তবুও গোলাম নাফিজ বুক চিতিয়ে নেমে এসেছিলেন রাস্তায়। সেদিন দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন নাফিজ।
রিকশার পাদানিতে ঝুলে থাকা গুলিবিদ্ধ নাফিসের নিথর দেহের দৃশ্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অন্যতম আলোচিত আলোকচিত্র। সেই মুহূর্তটি ধারণ করেছিলেন চিত্রসাংবাদিক জীবন। শুধু নাফিজই নন, এমন অনেক নিষ্ঠুরতা-বর্বরতার সাক্ষী এ আলোকচিত্রী।
জীবন বলেন, ‘দূর থেকে দেখছিলাম, হাত-পা ধরে পুলিশ একজনকে নিয়ে আসছিল। রিকশায় উঠাল। তখন দেখলাম পিঠ থেকে রক্ত ঝরছে। যে অফিসার নিয়ে এসেছিলেন, তিনি ময়লা পানি দিয়ে রক্তটা ধুইলেন। পরে রিকশাটা চলে গেল।’
তিনি আরও বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছিল, সিরিয়ার যুদ্ধে এসেছি। একটু পর পর গুলিবিদ্ধ মানুষ নিয়ে আসা হচ্ছিল। কারও পায়ে গুলি, কারও বুকে গুলি, কারও মাথার ভেতর অস্ত্র ঢুকিয়ে দেয়া হয়!
আদরের সন্তান বাসায় না ফেরায় রাজধানীর অলিগলি, হাসপাতালের মর্গে ছুটে বেড়ান বাবা-মা। পরে মানবজমিন পত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে খোঁজ পায় পরিবার।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাফিজের মা নাজমা আক্তার নাসিমা বলেন, ‘আমি তো আগে জানতাম না। পরে জেনেছি, আমার ছেলের সঙ্গে কতটা নৃশংসতা করা হয়েছে।’
ছবি দেখিয়ে নাফিজের বাবা গোলাম রহমান বলেন, ‘গুলি করার পর আমার ছেলেটা পশ্চিম দিকে সিজদা দিয়ে পড়ে ছিল। চোখের পানি তো আসবেই।’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জাতীয় বীর ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছন নাফিজের বড় ভাই গোলাম রাছেল। সেই সঙ্গে তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে নাফিজের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়ার।