ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে ডুবছে জনপদ। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় জেলার সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বন্যাদুর্গত মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
জানা গেছে, বন্যার পানিতে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত সোমবার (১৯ আগস্ট) রাত থেকেই জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রায় বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে এ তিন উপজেলাসহ সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ পুরোপুরি সংযোগ বন্ধ করা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ভারী বৃষ্টিতে ফেনী শহরে জলাবদ্ধতার কারণে দুপুর থেকে রাত অবধি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পরশুরামের সাতকুচিয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। পানির তীব্র স্রোতের কারণে ঠিকভাবে উদ্ধার কাজও করতে পারছেন না। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আরও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার ফজলুর রহমান বলেন, জেলায় চার লাখ গ্রাহকের মধ্যে তিন লাখের বেশি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৬টা) জেলার সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলার অল্প কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।
ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যার পানি কমার আগে সংযোগ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এর আগে, দুপুরের দিকে বন্যাকবলিত এলাকায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে স্পিডবোট নিয়ে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে বিজিবি সদস্য ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবারের শত শত স্বেচ্ছাসেবক দিনব্যাপী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উদ্ধার তৎপরতায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডও যুক্ত হচ্ছে। বন্যার কারণে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় সব গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যায় উদ্ধারকাজে সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সেনাবাহিনী ছয়টি স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন। আরও ছয়টি স্পিডবোট ফেনীর পথে রয়েছে। বিজিবির সদস্যরাও কাজ করছেন। কোস্টগার্ডও উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হচ্ছে।