কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। এতে এখন পর্যন্ত সাতজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরো দুজন। বন্যার কারণে ডুম্বুর জলবিদ্যৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর ফলে পানি ঢুকছে বাংলাদেশে।
ত্রিপুরার একটি সংবাদমাধ্যম বোরক টাইমসের খবরে জানা যায়, ১৯৯৩ সালের পর প্রথমবারের মতো ত্রিপুরার ডুম্বুর জলবিদ্যৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটিকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেছে।
ত্রিপুরায় চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর ফলে ৫ হাজার ৬০০ পরিবার নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। অবিরাম ভারি বর্ষণে এই অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার ফলে জলাধারের পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় ৩১ বছর পর এই গেট খোলার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডুম্বুর জলবিদ্যৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে। সমভূমিতে নদীতে পানি ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
ফলে কৃষিজমি এবং আবাসিক অঞ্চলসহ অনেক এলাকা এখন নিমজ্জিত হয়েছে। হাজার হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রাজস্ব সচিব ব্রিজেশ পাণ্ডে সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে রাজ্যের দক্ষিণ ত্রিপুরা ও গোমতী জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বাগাফায় ৩৭৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার, বেলোনিয়ায় ৩২৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং অমরপুরে ৩০৭ দশমিক ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত বাঁধের তিনটি গেটের মধ্যে একটি খুলে দেওয়া হয়েছে।
ত্রিপুরার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হাওড়া নদী বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়, ধলাই নদী মৌলভীবাজারে, মুহুরি নদী ফেনী জেলায় এবং খোয়াই নদী সিলেটে প্রবেশ করেছে।
খোয়াইয়ের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনি চন্দ্রন জানিয়েছেন, খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় জেলার দুটি মহকুমা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের নদীর কাছে মাছ ধরা এড়িয়ে চলতে এবং ভূমিধসপ্রবণ এলাকা থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।
ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সলিয়া, চিথলিয়া, সাতকুচিয়া, শাহপাড়া, জগতপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে অর্ধলাখ মানুষ ঘরে আটকে আছে।
এদিকে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে। পানির তোড়ে একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ত্রিপুরার গোমতী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তার অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে জানিয়েছেন, গোমতী নদীর পানি আরো বাড়তে পারে।ডুম্বুর জলবিদ্যৎ প্রকল্পে সেচ এবং জলবিদ্যুৎ উত্পাদন উভয়ের জন্য একটি অত্যাবশ্যক পানির উত্স। একই পরিস্থিতিতে সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে খোলা হয়েছিল। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) মঙ্গলবার জানিয়েছে, ত্রিপুরায় আরো দুইদিন ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। টানা এই বৃষ্টিপাত বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিদ্যমান নিম্নচাপের প্রভাবে এমন ভারী বৃষ্টি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে আইএমডি।