শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন কর্মসূচি নিয়ে ফের মাঠে নেমেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। চার দফা দাবিতে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে তাদের সপ্তাহব্যাপী ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচি। আগামী এক সপ্তাহ মাঠে থাকার এই কর্মসূচি গতকাল ভোরে ঘোষণা করেন ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। গতকাল কর্মসূচির প্রথম দিনে সারা দেশের যেসব স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা শহীদ হয়েছেন, সেসব স্থান অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রোডমার্চ সংশ্লিষ্ট স্থানে জড়ো হয়ে তারা এক মিনিট নীরবতা পালন করেন এবং শহীদদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনায় অংশ নেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চার দফা দাবি আদায়ে বিকাল ৩টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জমায়েত হন আন্দোলনকারীরা।
রোডমার্চ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-পাড়া-ফুলার রোড হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং শহীদদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, গণহত্যার বিচার চাই’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’; ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আমাদের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচির দাবি চারটি। প্রথম দাবি হলো- ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দল ও সরকার? যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি হলো- সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী মহাজোটের শরিক দলগুলোর পরিকল্পিত হত্যা, ডাকাতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গণ অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের তৃতীয় দাবি হলো- প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হামলা, মামলা এবং হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বারবার কায়েমের চেষ্টা করছে, তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণ ও নতুন সরকারে তাদের নিয়োগ বাতিল করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। চতুর্থ দাবি হলো- প্রশাসন ও বিচার বিভাগে যারা এতদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তাদের জন্য দ্রুততম সময়ে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে হবে।
সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আমরা দেখেছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিভিন্ন জায়গায় কমিটি দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই, আমরা এখনো এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। তাই আমাদের আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিতে আপনারা চাইলে ভলান্টিয়ার কমিটি গঠন করতে পারেন। তবে সেখানে কোনো সমন্বয়ক বা সহ-সমন্বয়ক থাকবে না। সবাই ভলান্টিয়ার সেখানে। কমিটি ঘোষণা করব কিনা সেটা আমরা পরবর্তীতে জানাব।