মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের দেশে ফেরত আসতে হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁরা ফেরত আসবেন। তবে অন্য কোথাও নিয়োগের প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাবে। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন মন্ত্রী।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার সর্বসম্মতিক্রমে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি থেকে শান্তিরক্ষী বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে দেশটিতে থাকা শান্তিরক্ষীদের মালি ছাড়তে হবে। সেখানে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী রয়েছেন।
জাতিসংঘের অন্য মিশনের নিয়োগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সব সময় জাতিসংঘকে অনুরোধ করি যে, তাদের কোনো মিশন থাকলে বাংলাদেশিদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য। আগামীতে দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে এ ধরনের শান্তিরক্ষা মিশন থাকবে না।
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদের আসন্ন সফরকে স্বাগত জানাচ্ছে। কারণ ঢাকা বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াশিংটনের সাথে আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে চায়। তিনি বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অব্যাহত সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানাই। আমাদের লুকানোর কিছু নেই। আমি বিশ্বাস করি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের খুব ভালো সময় কাটবে।” এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মার্কিন প্রতিনিধিদল নির্বাচনের বিষয়ে পরামর্শ দিলে ঢাকা স্বাগত জানাবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে তাদের কোনো উজ্জ্বল ধারণা থাকলে আমরা তা পছন্দ করতে পারি। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা দূর করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের আরও সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
ড. মোমেন বলেন, অজ্ঞতার কারণে এবং একটি স্বার্থান্বেষী মহলের দেওয়া কিছু ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ঢাকা র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ওয়াশিংটনকে অনুরোধ করেছে এবং জবাবে যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলেছে। আমরা প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, আওয়ামী লীগ নতুন নীতি নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়। শুধুমাত্র তারাই চিন্তিত, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে আগ্রহী।
তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা (মার্কিন) বাংলাদেশকে হারাতে চায় না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে এমন একটি ধারণা রয়েছে। কিন্তু ঢাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক নির্ধারিত – সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়’ –এই নীতি অনুসরণ করে “নিরপেক্ষভাবে” পররাষ্ট্র নীতি বজায় রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় আসবেন এবং তৃতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ইকোনমিক গ্রোথ, এনার্জি এবং এনভায়রনমেন্ট বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জোসে ফার্নান্দেজ এখানে আসার কথা রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু চার দিনের সফরে উজরা জেয়ার সঙ্গে থাকবেন বলে কথা রয়েছে।