ভারত ভ্রমণে ট্যাক্স বৃদ্ধি দ্বিগুণ হলেও কমেনি যাত্রীদের ভোগান্তি

ভারত ভ্রমণে ট্যাক্স বৃদ্ধি দ্বিগুণ হলেও কমেনি যাত্রীদের ভোগান্তি
যাত্রীদের ভোগান্তি - সংগৃহীত ছবি

স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ভ্রমণে ‘ট্রাভেল ট্যাক্স’ বেড়েছে। আগে দেয়া লাগত ৫০০ টাকা। গতকাল (১ জুলাই) থেকে তা বেড়ে হয়েছে এক হাজার টাকা। ভ্রমণ কর দ্বিগুণ হলেও কিন্তু কমেনি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভোগান্তি। ভোগান্তির মাত্রা বরং বেড়েছে। সেবার মানের অবস্থাও যাচ্ছেতাই। বেনাপোল স্থলবন্দরে এমনটিই দেখা গেল গতকাল।

শনিবার (০১ জুলাই) থেকে ভারত যাতায়াতে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভ্রমণ ট্যাক্স সোনালী ব্যাংক দ্বিগুণ হারে আদায় করছে। বড়দের ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা আর শিশুদের ২৫০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকা নির্ধারণ হয়েছে। দ্বিগুণ ট্যাক্স আদায়ে ভ্রমণখাতে বিরুপ প্রভাব পড়বে বলছেন যাত্রীরা। এদিকে যাত্রী যাতায়াত ও ট্যাক্স বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

জানা যায়, প্রতিদিন বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এসব যাত্রীর ৫০ শতাংশ চিকিৎসা, ৩০ শতাংশ ভ্রমণ, ১০ শতাংশ ব্যবসা ও ১০ শতাংশ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে ভ্রমণ করে। আগে ভারত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ১২ বছরের ঊর্ধ্বে পাসপোর্টধারীদের ভ্রমণ কর ৫০০ টাকা ও ৫ বছর থেকে ১২ বছরের শিশুদের ভ্রমণ ট্যাক্স ২৫০ টাকা নেয়া হতো।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে স্থলপথে ভারত ভ্রমণে ১২ বছরের ঊর্ধ্বে যাত্রীদের ভ্রমণ কর দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১০০০ টাকা ও শিশুদের ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। নতুন অর্থবছর শুরুতে জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে এ নিয়ম কার্যকর করে সোনালী ব্যাংক। একসঙ্গে দ্বিগুণ অর্থ পরিশোধ করতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানালেন যাত্রীরা।

এদিকে, যাত্রীদের আগের কাটা ৫০০ টাকার ভ্রমণ ট্যাক্স কপি বাতিল ও শিশুদের ৫০০ টাকার ভ্রমণ করের রসিদ বই সোনালী ব্যাংকে সরবরাহ না থাকায় শিশুদের কাছ থেকেও হাজার টাকা আদায় করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। যাত্রী যাতায়াত বাড়লেও সেবার মান নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে যাত্রীদের।

পাসপোর্টধারী যাত্রী অনিমেশ সরকার জানান, ভারতে চিকিৎসা, ব্যবসা, ভ্রমণ ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করে থাকে। দ্বিগুণ ট্যাক্স বৃদ্ধি ভ্রমণখাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভারতগামী যাত্রী বরিশালের কুদ্দুস জানান, বর্তমানে ভারত ভ্রমণে পূর্ণ বয়স্কদের বাংলাদেশ সরকারকে ভ্রমণ ট্যাক্স ১০০০ টাকা ও পোর্ট ট্যাক্স ৫৫ টাকা ও ভিসা ফি বাবদ ভারতীয় দূতাবাসকে ৮৫০ টাকা। সব মিলিয়ে ১৯০৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। এতে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হবে দেশ, বিদেশি পর্যটকরা।

পাসপোর্টধারী যাত্রী রাশিদা বেগম দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুদের ভ্রমণ কর ৫০০ টাকা। কিন্তু সোনালী ব্যাংকে ৫০০ টাকার রসিদ বই না থাকায় শিশুদেরও হাজার টাকা দিতে হয়েছে।’

ঢাকা থেকে চিকিৎসার উদ্দেশে ভারত যাওয়ার পথে আছমা আক্তার বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে চিকিৎসা করাতে কলকাতা যাচ্ছি। বেনাপোলে সীমান্তে এসে দীর্ঘ লাইনে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। ভোর ৪ টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত বন্দরের বাইরে রাস্তায় দাঁড়ানো। যে অবস্থা তাতে ওপারে ঢুকতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগবে।

বেনাপোল স্থলবন্দর আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশের উপপরিদর্শক শেখ মাসুদ জানান, ঈদের ছুটিতে যাত্রী চাপ বেড়েছে। তবে দালালের সঙ্গে লেনদেন না করতে যাত্রীদের অনুরোধ করা হচ্ছে।

বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, ভোরে একসঙ্গে সব পরিবহন এসে পৌঁছানোর কারণে ভিড় বেশি হচ্ছে। যাত্রীসেবা বাড়াতে ইতিমধ্যে পোর্ট ট্যাক্স অনলাইনে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বন্দরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের জন্য জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে।

বেনাপোল বন্দরে অবস্থিত সোনালি ব্যাংক অফিসার (ক্যাশ) মনিমহন সানা ওই পত্রিকাকে জানান, ‘সোনালি ব্যাংকের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ভ্রমণ ট্যাক্সের পরিমাণ শনিবার থেকে দ্বিগুণ নেয়া হচ্ছে। তবে শিশুদের ৫০০ টাকার রসিদ বই এখনও হাতে পায়নি।’

বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব ওই পত্রিকাকে জানান, ঈদের দিন বেনাপোল ইমিগ্রেশন হয়ে ভারতে গেছে ৭ হাজার ২৪০ পাসপোর্টধারী যাত্রী। ঈদে যাত্রী চাপ বেড়েছে। তারা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে।