একদিকে তীব্র গরম আর অন্যদিকে ঘনঘন লোডশেডিং- সব মিলিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দেশের ওপর দিয়ে যে তাপপ্রবাহ চলছে, তা আরও পাঁচ-ছয় দিন চলতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
গত কয়েকদিনের চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ দুর্ভোগ। এর মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় ঘরের বাইরে বের হতে পারছে না মানুষ। জীবিকার তাগিদে যারা বের হচ্ছেন, তাদের অবস্থাও শোচনীয়। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ।
নীরব নামে রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রী বহনকারী এক মোটরসাইকেল চালক দেশের একটি শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকাকে বলেন, ‘এ রোদে মোটরসাইকেল চালাতে কষ্ট হয়। তার ওপর দীর্ঘক্ষণ জ্যামে বসে থাকতে হয়। কিন্তু জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই বের হতে হয়। এতেও তেমন লাভ হচ্ছে না। রোদ আর গরমের কারণে এখন মানুষ মোটরসাইকেলে যেতে চায় না। কষ্ট করে হলেও বাস বা রিকশায় যায়। কারণ বাস ও রিকশায় অন্তত মাথার ওপর ছায়া দেয়ার মতো কিছু আছে, মোটরসাইকেলে গেলে তো রোদে পুড়তে হয়।’
ফুটপাতে ফুল বিক্রি করা আরেক দিনমজুর আজাদ লতিফ বলেন, ‘বিছানায় গা এলাতে গেলেও গরম লাগে। ঘরে যে একটা ফ্যান আছে, তা দিয়াও কুলায় না। এমন গরম আমার বাপের জন্মেও দেখি নাই। মন চায় ফুল বিক্রি বাদ দিয়া গাছের তলায় শুইয়া থাকি। কিন্তু সেই সুযোগ নাই। তাহলে খামু কী?’
আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তা মনোয়ার হোসনে ওই পত্রিকাকে বলেন, তাপপ্রবাহ সহসাই কমছে না। চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা কমতে পারে। সেখানে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশের অন্যান্য জায়গায় আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে তাপপ্রবাহ কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকার তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। জ্বালানির অভাবে দেশের বেশ কটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ থাকায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা ছাড়িয়েছে তিন হাজার মেগাওয়াট।
তীব্র গরম আর ঘনঘন লোডশেডিংয়ে জনজীবনে এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ঘরে-বাইরে সব খানেই গরম। কাজে বা প্রয়োজনে এ গরম উপেক্ষা করে যারা ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন তারা যেমন বিপাকে, তেমনি যারা ঘরে আছেন, স্বস্তিতে নেই তারাও। এদিকে, দিনের পাশাপাশি রাতেও হচ্ছে লোডশেডিং।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, দিনে কমপক্ষে তিন থেকে চারবার, কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়বার পর্যন্ত লোডশেডিং চলছে। অসহনীয় গরমের মধ্যে রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ঘুমের ব্যঘাত ঘটছে সাধারণ মানুষের। সরকারি হিসেবেই সারা দেশে বর্তমানে দিনে আড়াই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
রাজধানীতে ডিপিডিসি প্রতিঘণ্টায় ৩২০ এবং ডেসকো প্রতিঘণ্টায় ২৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) হিসাব বলছে, দিনের চেয়ে রাতে লোডশেডিং বেশি। চলতি মাসের শুরুর দুদিনের পরিসংখ্যান সেই তথ্যই জানাচ্ছে। কারণ রাতে যে পরিমাণ চাহিদা থাকে, সেই পরিমাণ উৎপাদন হয় না। বৃষ্টি হয়ে গরম কমে এলে দিনে এবং রাতে কমবে চাহিদা। তাই আপাতত প্রকৃতিই ভরসা। এর বাইরে চলতি মাসের শেষ দিকে আমদানি করা কয়লা এলে উৎপাদনে আসবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। আর তখনই কেবল কমতে পারে লোডশেডিং।
এদিকে, সরাদেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজ (৫ জুন) থেকে ৮ জুন (বৃহস্পতিবার) বন্ধ থাকবে।