ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে মহাসড়কগুলোতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশ ও র্যাবকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যাতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত উদ্ধার অভিযান চালানো যায়। একইসঙ্গে ছুটির দিনগুলোতে বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও নৌপথে আকস্মিক দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজ চালাতে ফায়ার সার্ভিস, রেসকিউ বোট, ডুবুরি, আগুন নেভানোর সরঞ্জামাদিসহ অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখতেও বলা হয়েছে। সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে কোস্ট গার্ডকে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদর দফতর ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে কন্ট্রোল রুম স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঈদ ও পহেলা বৈশাখকেন্দ্রিক সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বুধবার (১২ এপ্রিল) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কগুলোতে সৃষ্ট খানা-খন্দক দ্রুত ও মানসম্মতভাবে মেরামতের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, মাহিন্দ্র ইত্যাদি চলাচল বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা ছাড়াও দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দ্রুত অপসারণ করে পার্শ্ববর্তী খালি জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে। যাতে দুর্ঘটনাজনিত পরিস্থিতিতে যানজটের সৃষ্টি না হয়।
জরুরি সার্ভিস গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ইত্যাদির সহায়তা পেতে ৯৯৯ সার্ভিসের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে। টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রাসহ গুরুত্বপূর্ণ কনস্ট্রাকশন স্থানে ছোটখাটো গর্ত, ভাঙা জায়গা মেরামত ও হেয়ারিং করার জন্য একটি টিমকে ২৪ ঘণ্টা নিয়োজিত করার সুপারিশ করা হয়। যানজট এড়াতে পরিস্থিতি মনিটর করতে রেল স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, জেলা পুলিশ টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াবে। ঈদের আগে সাত দিন ও পরে সাত দিন সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন না থামানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের নিরাপত্তায় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি নারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। একই সময়ে র্যাবের দৃশ্যমান টহল জোরদার করতে হবে। ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতে ও মার্কেটগুলোতে রাত্রীকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন, বিশেষ বিশেষ রাস্তা ও মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন, টাকা স্থানান্তরে মানি এস্কর্ট প্রদান, জালটাকার বিস্তার রোধ ও শনাক্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও নৌ-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তাছাড়া ঈদের ছুটিতে রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়াসহ সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং দেশের অন্যান্য বড় বড় শহর ও বন্দরে পুলিশের টহল বাড়াতে বলা হয়েছে। চুরি-ডাকাতি রোধে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় পুলিশের দৃশ্যমান টহল রাখতে বলা হয়েছে।
ঈদ ও পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় কোনও নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এমন কোনও আশঙ্কা নেই। তবে গুজব রটনাকারীদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারাও এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে।’