জনগণকে একটি সুন্দর জীবন দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ জনগণের মাথাপিছু আয় ১২ হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীত করা। তবে, দেশের এই অগ্রযাত্রায় তিনি যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবিলাতেও সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের এখানেই থেমে থাকলে চলবেনা, ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। ’৪১ সালের মধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় যাতে ১২ হাজার মার্কিন ডলার হয় আমাদের সেই লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং সেভাবেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।’
“তবে, এই করোনার কারণে অনেক দেশ পিছিয়ে গেছে, আমরাও একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। কিন্তু মানুষকে বুঝতে দেইনি,” যোগ করেন তিনি।
তিনি আজ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) বার্ষিক সম্মেলন ২০২৩-এ প্রধান অতিথির ভাষণে এ সব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই দুর্যোগের মধ্যেও অর্থনীতির হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়েছে, অনেক সংস্থাই এ কথাটা বলছে বাংলাদেশ এখন ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এর মাঝেও আমরা প্রায় ৫ ধাপ এগিয়েছি। এটাও কিন্তু কম কথা নয়। কিন্ত এ কথাটাও মনে রাখবেন যে যত বেশি সামনের দিকে দ্রুত এগোবেন তত বেশি চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। কারণ অনেকেইতো আছে- যারা আমাদের স্বাধীনতা আসুক সেটাই চায়নি। তিনি বলেন, কাজেই আমাদের অগ্রযাত্রাটা অনেকের পছন্দ হবে না, যারা স্বাধীনতার সময় আমাদের সমর্থন দেয়নি। কারণ তারা মনে করতে পারে তাদের সাথে টেক্কা দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমরা তা পারি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশের মানুষ যে পারে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।
তবে, এই করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে এবং উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের জন্য কর্মকর্তাদের কৃতিত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশাসনের নবীন বিসিএস কর্মকর্তাদের ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধশালী ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী জনগণকে উন্নত জীবন দেয়ার দায়িত্ব তাদের রয়েছে।
তিনি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে আন্তরিক দেখেছেন। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় উচ্চ প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনের মহাসচিব ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসএম আলম।
’৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ কেমন হবে- সে সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি; এবার ঘোষণা দিয়েছি ২০৪১-এর বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নেন্স অর্থাৎ ই-গভর্নেন্স সেই সাথে সাথে জনগণও যেন স্মার্ট হয়।
দেশের কেউ পিছিয়ে থাকবে না জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, কোন ক্ষেত্রেই কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না। যারা আছে পিছে আমরা আছি তাদের সাথে। আমরা তাদের সাথে আছি, তাদেরকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। তাদের জীবন সুন্দর করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সরকার গঠন করার সময় বলেছি -আমি জনগণের সেবক, যেটা আমার বাবাও বলেছেন। তাঁরই কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে আমিও তাই বলেছি এখানে ক্ষমতা উপভোগ করতে আসিনি, এসেছি দিতে, মানুষের জন্য কিছু করতে। আমরা মাত্র ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে আসি, সময় কম তাই কাজ বেশি করতে হবে। কাজেই আমি যে কাজের দায়িত্বটা নেবো সেটা করার দায়িত্ব এই মাঠ প্রশাসনের সকলেরই। ’৯৬ থেকে ২০০১ বা ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত যাঁরা আমার সঙ্গে কাজ করেছেন তারা ওই আমলাতান্ত্রিক ভাব নিয়ে না থেকে জনগণের জন্য কাজ করে তাদের (জনগণ) সঙ্গে মিশে যেতে পেরেছেন, যেটা আমাদের আকাঙ্খা ছিল। এজন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ, অগ্নি সন্ত্রাস, মাসের পর মাস অবরোধ, হরতালসহ এতকিছু মোকাবিলা করে আমরা যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় আনতে পেরেছি এটার জন্য সবটুকু কৃতিত্ব আপনাদেরই, যারা মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ছিলেন, বলেন তিনি।
১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে জাতির পিতার দেয়া ভাষণের উদ্ধৃতি-‘সরকারি কর্মচারিদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে যে তারা শাসক নন সেবক,’ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটাই কিন্তু আপনাদের মাঝে আমি দেখতে পাই সেজন্য সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। আমাদের সফলতা তখনই আসে যখন আপনারা সফলতার সঙ্গে দায়িত্বটা পালন করেন।
তিনি বলেন, আপনারা নিজেরাও দেখেছেন সাধারণ মানুষের জন্য একটু কাজ করলে তারা যে তৃপ্তি বা স্বস্তি পায় বা আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটা ঘর করে দিলে সাধারণ মানুষের মুখের হাসি আর চোখের পানি যে একাকার হয়ে যায় তাতে কি মনে হয়না এরসঙ্গে আমরাও সম্পৃক্ত হয়ে গেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলায় একটি মানুষও আর গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবেনা আমরা সেই লক্ষ্যটাই এখন অর্জন করতে চাই। তাঁর সরকারের গৃহীত উদ্যোগে দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নেমে এসেছে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কেউ হতদরিদ্র থাকবেনা বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তবে, করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশকে আরো দ্রুত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব হতে পারতো। এই মন্দা মোকাবিলায় দেশের সকল অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে নিজেদের খাদ্য নিজেদেরই উৎপাদন করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সকলের বেতন-ভাতা প্রায় ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করে দিয়েছি, গাড়ি, ফ্ল্যাট কেনার ঋণ এগুলোরও ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আমরা দিয়েছি। এই কারণে যে- আমরা কাজ চাই, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ১৯৬৯-এর ২৪ জানুয়ারি গণ-অভ্যুত্থান দিবসের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে শহীদ মতিউরকে স্মরণ করেন। ’৮৮ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে সমাবেশ করতে গেলে তাঁকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া গুলিতে ৩০ নেতা-কর্মী নিহত হবার কথাও ভাষণে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সূত্রঃ বাসস