‘বিএনপি যতটুকু রাজনীতি পারে সেটা আওয়ামী লীগের কাছেই শেখা’

বিএনপি যতটুকু রাজনীতি পারে সেটা আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই শিখেছে। তার দলের সাথে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করার সময় বিএনপি কিছুটা রাজনীতি শিখেছে। এর বাইরে বিএনপির রাজনৈতিক জ্ঞান নাই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। জনগণও জানে কীভাবে সেই সরকার উৎখাত করতে হয়। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। আমরা ভোট চুরি করতে যাব কেন? জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। আর বিএনপি জিতবে কীভাবে? ২০১৮ সালের নির্বাচন। এক আসনে যদি তিনজন করে নমিনেশন দেয়, ফখরুল একজনকে দেয়, রিজভী আরেক জনকে দেয়, আর লন্ডন থেকে তারেক দেয় আরেক জনকে। যে যত টাকা পায়, সে ততটা নমিনেশন দেয়। সেখানে নমিনেশন মানে টাকার খেলা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির অন্তত দুজন নেতা আমার কাছে এসে নালিশ করে গেছে। সিলেটের এনাম চৌধুরী এসে বললেন, দেখো আমার কাছে টাকা চেয়েছে তারেক জিয়া, আমি দিতে পারিনি। তাই আমার নমিনেশন বাতিল করে যার কাছে টাকা পেয়েছে তাকে দিয়েছে। মোর্শেদ খান, তিনি নিজে এসে বলেছেন যে, তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চাওয়া হয়েছে। সেই জন্য সে বলেছে, আমি এই টাকা দিতে পারব না। ব্যাস, তার নমিনেশন ক্যান্সেল। এই হলো তাদের ২০১৮ সালের নির্বাচন। আমাদের অনেক ইন্টেলেকচুয়াল সেটা লিখতে ভুলেই গেছেন। ওইভাবে নির্বাচন করে নির্বাচন জেতা যায় না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভোট চুরি, ভোট কারচুপি’- এই কালচার কে নিয়ে এসেছে? এটা তো জিয়াউর রহমান নিয়ে এসেছে। হ্যাঁ-না ভোট, না-এর বাক্স পাওয়াই যায়নি, খালি হ্যাঁ-এর বাক্স পাওয়া গেছে। ৭৭ এর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ৭৯ এর সংসদ নির্বাচন, আগে থেকেই ঠিক করা কোন পার্টি কোন সিট পাবে। এই তো ইলেকশনের চেহারা।\’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোট নিয়েই সরকারে এসেছে, কখনো ভিন্ন পথে সরকারে আসেনি, আসবেও না।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। বাংলাদেশের মানুষের যত অর্জন, তার প্রতিটি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ এই গণতান্ত্রিক পার্টির হাত ধরে, যে দলের হাত ধরে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু বিএনপি-জামাতের জন্ম হয়েছে কোথা থেকে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা আমাদেরকে সংবিধান দিয়েছিলেন। যে সংবিধানে যুদ্ধাপরাধী, পাকিস্তানের দোসর আল বদর-রাজাকারদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, তাদের ভোটাধিকার ছিল না। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে মার্শাল ল দিয়ে সঙ্গিনের খোঁচায় ওই সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে দেয়। ৩৮ অনুচ্ছেদের আংশিক বিলুপ্ত করে দিয়ে এই যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে ওই জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার আদর্শেই তারা বিশ্বাস করত না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের লাখো মানুষ জীবন দিয়েছে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে। সেই জয় বাংলা স্লোগানও তারা নিষিদ্ধ করেছিল। মানুষের স্বাধীনতার ইতিহাসই আমাদের কয়েকটি প্রজন্ম জানতেই পারেনি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে।’

স্বাধীনতার পর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে বঙ্গবন্ধু কীভাবে গড়ে তুলেছিলেন তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জনগণের শক্তি, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে দিয়ে যারা ক্ষমতা দখল করেছে, তারা তা বন্দি করেছিল ওই ক্যান্টনমেন্টে। জনগণের ভোটের অধিকার বিএনপি-জামাতের হাতে ছিল না। ক্ষমতায় বসিয়েছিল ওই যুদ্ধাপরাধীদের। যারা নারী ধর্ষণকারী, লুটপাটকারী, অগ্নি সংযোগকারী, তারাই ক্ষমতায়। তার ওপর ১৫ আগস্টের খুনি। তাদেরকে ইনডেমনিটি দিয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল দুর্ভিক্ষের দেশ, ঘড়-বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। অন্যের কাছে হাত পেতে বাংলাদেশকে চলতে হতো। এই তো বিএনপির কার্যক্রম। এরশাদ, খালেদা জিয়া একই কাজ করেছে। বাংলাদেশ এখন আর সেই বাংলাদেশ না। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, আমরা দেশের দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে উদ্যোগ নেই। আমাদের লক্ষ্য ছিল হারানো গৌরব ফিরে পাওয়া।’

তিনি বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, পাঁচ পাঁচ বার বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দেশকে বিএনপি এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে ইমার্জেন্সি হয়। সেই ইমার্জেন্সিও যারা করেছিল সেই প্রেসিডেন্টও বিএনপির, প্রধান উপদেষ্টা, ফখরুদ্দিন, মইনুদ্দিন, সবই বিএনপির সৃষ্টি। কিন্তু তারাই বাধ্য হয়েছিল ক্ষমতা দখল করতে। ক্ষমতা দখল করে তারা কিন্তু গ্রেপ্তার করলো আমাকে, খালেদা জিয়াকে না। এটাই হচ্ছে আশ্চর্যের বিষয়। কারণ, আমি তাদের কিছু কাজের সমালোচনা করেছিলাম। আমি সত্য কথা বলতে কখনো ভয় পাই না। তাদের হাতেই মামলা, সেই মামলায় তারা সাজা পেয়েছে। খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ বিদেশ থেকে আসা জিয়া ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ করেছে, একটি টাকাও কোনো এতিমখানায় যায়নি। সব নিজে রেখে দিয়েছে। এই কারণেই তারা সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’

বক্তব্যের শেষাংশে তার সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এবং পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু গুজব ছাড়াচ্ছে। ব্যাংকে টাকা নেই। টাকা নেই বলে অনেকে টাকা তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। আগেও বলেছি, আবার বলছি, এদের কি চোরের সঙ্গে সখ্যতা আছে কি না। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে রাখলে চোরের পোয়া বারো। সেই ব্যবস্থা কেউ কেউ করে দিচ্ছে কি না আমি জানি না।’

তিনি বলেন, ‘আমি অর্থ সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি, আজ সকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। আল্লাহ রহমতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। প্রতি ব্যাংকেই টাকা আছে। কাজেই আমি বলব, গুজবে কেউ কান দেবেন না।’

Scroll to Top