তামিলনাড়ুর কয়েমবাটোরের আথুপালাম। সেখানে সোমবার রাতে ঘটে গেছে এক তুলকালাম কাণ্ড। রাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে সেখানকার একটি টোলপ্লাজা অতিক্রম করে দ্রুতগতিতে ছুটছিল তিনটি কন্টেইনার ট্রাক। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে ওই ট্রাকগুলোতে টাকা (ভারতের মুদ্রায় রুপি) ভর্তি। আর যায় কোথা!
অমনি ট্রাকগুলোর গতিরোধ করা হলো। ট্রাকে কি আছে তা চালক ব্যাখ্যা করার আগেই চারদিকে বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়ল গুজব। ছুটে এলো অসংখ্য মানুষ। তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে শেষ পর্যন্ত সেখানে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়।
পরে পরীক্ষা করে দেখা যায় ওই তিনটি ট্রাকে টাকা নয়, আছে চা। ১৬ টন টি-ব্যাগ নিয়ে তা যাচ্ছিল কোচি বন্দরে সরবরাহ দিতে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।
সোমবারে রাতে ওই ট্রাকগুলো আথুপালাম টোলপ্লাজা অতিক্রম করছিল। এ সময় কিছু মানুষের সন্দেহ হয় এখন নির্বাচন। এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে গোপনে ট্রাকে করে টাকা নেয়া হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা ট্রাক থামিয়ে দেয়। চালক তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু উত্তেজিত জনতার ভিড়ে চালকের কথা হারিয়ে যায়। ততক্ষণে খবর ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশ থেকে ছুটে যায় বিপুল সংখ্যক মানুষ। তাদের মধ্যে বলাবলি হয়, তিনটি ট্রাকে করে নেয়া হচ্ছে টাকা। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় পাশেই তিরুপুরে তিনটি ট্রাক জব্দ করে তা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ৫৭০ কোটি রুপি। সেই কথা অনেকে স্মরণ করেন। তারা মনে করেন, ওই একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে তাদের এলাকায়ও। এমন সন্দেহে তারা রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টি করে।
এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ। তাদের নেতৃত্ব দেন পুলিশের উপ কমিশনার এল বালাজি সারাভানান। উড়ে আসেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা ট্রাকচালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। চালক প্রকাশ বলেন, কন্টেইনারে আছে ১৬ টন টি-ব্যাগ। কিন্তু তার কথা কেউ শুনছিল না। তারা বার বারই বলছিল, ট্রাককে যেতে দেবে না, যতক্ষণ না কন্টেইনারগুলি খুলে দিই। তার এ কথার পর পুলিশ জনতাকে সরে যেতে বলে। কিন্তু তারা সরতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ফলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা।
এরপর ট্রাকগুলো নিয়ে যাওয়া হয় কালেক্টরেটে। তহশিলদার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে খোলা হয় তা। এ সময় উপস্থিত থাকতে দেয়া হয় রাজনৈতিক কিছু দলের লোকজনকে এবং স্থানীয় কিছু মানুষকে, যাতে তারা প্রত্যক্ষ করতে পারেন ভিতরে কি আছে। এরপর তা আবার তালা মেরে সিল করে দেয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে কালেক্টর আর রাজামণির উপস্থিতিতে আবার খোলা হয়। সব বান্ডিল পরীক্ষা করেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা নিশ্চিত করেন এর ভিতর টাকা নয়, আছে চায়ের ব্যাগ।
ওই তিনটি ট্রাকে যে চালান ছিল তার মালিক শাহ ব্রাদার্স-এর পরিচালক হেমেন শাহ। তিনি বলেছেন, এতে যে চা আছে তার মূল্য ৩০ লাখ রুপি। পাঠানো হয়েছিল কোচি বন্দরে। তার ভাষায়, আমি বায়ারদের কথা দিয়েছিলাম এই চালান মঙ্গলবার সকালের মধ্যে কোচিতে পৌঁছে যাবে। এই চালানটি যাওয়ার কথা ছিল জার্মানিতে। যেহেতু শিপমেন্ট ধরানো যায় নি, তাই এ থেকে আমার বড় লোকসান হবে। পরীক্ষা শেষে ওই চায়ের চালান মালিককে ফেরত দেয়া হয়েছে।