মার্কিন মেরিন সদস্য রিচার্ড ম্যাককিনি বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। অবসরের পর যদিও তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে নেই, তবু তিনি মানসিকভাবে সবসময় নিজেকে যোদ্ধা মনে করতেন। ইসলাম ছিল তার মনোজগতের সেই যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিপক্ষ।
সামরিক বাহিনীতে কাজ করার সময়, ম্যাককিনির কাছে হত্যা করা ছিল খুবই সহজ বিষয় এবং তার প্রতিটি হত্যার জন্য তিনি ছোট করে একটি বিন্দুর মত ট্যাটু তার বুকে আঁকতেন। তিনি জানান তিনি এমন অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন যা তিনি কারো সাথেই কখনো আলোচনা করেননি।
তিনি বলেন, “আমি ইসলামকে ঘৃণা করতাম না, কিন্তু বিভিন্ন বিষয় আমি প্রত্যক্ষ করি যার ফলে আমার অনুভূতি এমন হয়ে যায়।”
চাকরী শেষে আমেরিকায় ফিরে আসার পর তিনি তার নিজের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে লিপ্ত হন। তিনি মদ পান করা শুরু করেন এবং মুসলিমদের প্রতি তার মনে ভয়াবহ বিদ্বেষ জন্ম নেয়। তিনি বলেন যে, তার ঘৃণা এতই অধিক ছিল যে, তিনি সকল মুসলিমের মৃত্যু কামনা করতেন।
তিনি বলেন, “আমি মসজিদ উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম, আমার দেশের ভালোর জন্যই এটি আমি চেয়েছিলাম… কিন্তু আমার সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।”
ম্যাককিনি তার স্থানীয় মসজিদটি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিজে নিজে বোমা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন, এতে অন্তত দুইশত জন মুসলমান নিহত হবে। এই কাজে তার মৃত্যুদন্ড হতে পারে জেনেও তিনি কোন পরোয়া করেননি।
ম্যাককিনির এই তীব্র বিদ্বেষ একদিন প্রশমিত হয়। সেদিন তিনি তার শিশু কন্যার সামনে মুসলমানদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তীব্র গালমন্দ করছিলেন। তিনি জানান, তার গালমন্দে তার কন্যা হতবাক হয়ে গিয়েছিল এবং তার কন্যার চোখে তিনি লক্ষ্য করছিলেন তীব্র বিস্ময়।
ম্যাককিনি বলেন, “শিশুরা কুসংস্কার, ঘৃণা ও বর্ণবাদ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। কিন্তু পিতা-মাতা যখন এমন ধারণা পোষণ করে, তখন তারাও নিজেদেরকে একই চিন্তার আদলে গড়ে তোলে যেভাবে আমরা চিন্তা করি। তাই আমি চিন্তা করলাম আমি আমার ঘৃণাকে সুন্দরভাবে মোকাবেলার একটি পথ খুঁজে নিই।”
ম্যাককিনি তার স্থানীয় মসজিদে যান, কিন্তু কোন বোমা নিয়ে নয়। তার পরিবর্তে তিনি ছুড়ে দেন এক গাদা প্রশ্ন। তাকে কুরআনের একটি ইংরেজি অনুবাদ দেওয়া হয় এবং তার পাঠের পর কোন প্রশ্ন থাকলে তার উত্তর পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “এমন কেউই ছিল না প্রথম দিন থেকে যার দরজায় আমি গিয়েছি, আমার সাথে দুর্ব্যবহার, ঘৃণাপূর্ণ আচরণ পোষণ করেছেন এমনকি আমি মুসলমান না হওয়া সত্ত্বেও। মুসলমান হওয়ার আগেই সবাই আমাকে ভাইয়ের মত উন্মুক্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণভাবে গ্রহণ করেছে।”
ম্যাককিনি মসজিদে সময় কাটানো শুরু করেন এবং মাত্র আট সপ্তাহ পরেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
বর্তমানে তিনি সকলকে ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রতিরোধ করতে কাজ করছেন।
ম্যাককিনি বলেন, “আমি অনেক কাজ করেছি। অনেক লোককে আঘাত করেছি। আমাকে তার মধ্য দিয়ে বাস করতে হবে, কিন্তু আমার যদি সুযোগ হয় কাউকে হিংসার পথ থেকে ফেরানোর, তবে আমি তা করবো।”