বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল কালাম সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এক ম্রো নারীকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। যে ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এসব ছবি শেয়ার করে অনেকেই ‘নারীকে যৌন হয়রানি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু আলোচিত সেই ম্রো নারী বলছেন, সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। সংবাদ সম্মেলনে সেই নারী জানিয়েছেন, আবেগে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সময় নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন।
তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান আবুল কালামের সঙ্গে আমাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের একটি সম্পর্ক। আমরা তাকে অসাম্প্রদায়িক ও সৎ চরিত্রবান ব্যক্তি হিসেবে জানি। তার বাবাও তার মতো সব সম্প্রদায়ের প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। জয়ী হওয়ার পর আমরা পাড়াবাসী তাকে সংবর্ধনা দেই। সংবর্ধনা চলাকালে আমি অন্যদের মতো চেয়ারম্যানকে মাল্যদান করার পর আবেগপ্রবণ হয়ে খুশিতে কান্না করে ফেলি এবং একপর্যায়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সময় চেয়ারম্যান আমাকে ধরে ফেলেন। তিনি এমনটা না করলে আমি গুরুতর আহত হতাম।
ম্রো সম্প্রদায়ের এই নারী আরও বলেন, চেয়ারম্যান কান্না থামানোর জন্য আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আমার পরিবারের সদস্য মা-বাবা ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাসহ দুই শতাধিক লোক সংবর্ধনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারম্যানকে আমি আপন বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করি এবং তিনি আমাদের ছোট বোনের মতো জানেন। তার মধ্যে আমি বা আমরা কখনো খারাপ কিছু দেখিনি। তিনি এই ধরনের লোক নয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি আমার ও চেয়ারম্যান আবুল কালামের ছবিসহ অনুষ্ঠানের কিছু ছবি চেয়ারম্যান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করেন। ওই ছবিগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের কিছু লোক ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আমাদের ছবিগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে বিকৃত মন্তব্য করেন, যা আমার এবং চেয়ারম্যানের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। আমি ও আমার পরিবার চেয়ারম্যানকে আমাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে জানি। আমি তার একজন ভক্তও বটে।’
তিনি আরও বলেন, এ ছবিগুলো ভাইরাল করা আমার ও আমাদের পরিবারের বক্তব্য নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে একটি সুন্দর ভ্রাতৃত্ববোধকে পুরো পার্বত্য এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ছবিগুলো ভাইরাল করা হয়। সাধারণত ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এ ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি সৃষ্টি করে তৃপ্তি পায়। আমি ও আমার পরিবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি এ ধরনের অপপ্রচার যারা করে তারা এলাকার শান্তি চায় না, সহাবস্থান চায় না। কেন আমাদের নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে আমি জানি না, এটা দুঃখজনক ও মানহানিকর।
সংবাদ সম্মেলন শেষে স্থানীয় সাংবাদিকরা ওই নারীকে প্রশ্ন করেন উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধে আপনার কোনো অভিযোগ আছে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, আমার কোনো অভিযোগ নেই। আবুল কালাম আমার ভাই।
প্রসঙ্গত, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ম্রো সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে সংবর্ধনা নেয়ার সময় বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ওই নারীকে জড়িয়ে ধরেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই ঘটনার কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন আবুল কালাম।
এ বিষয়ে আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, কুরুক পাতা ইউনিয়নের মেরিন চর এলাকায় আমাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ আমাকে সংবর্ধনা দেয়। যে মেয়ের সঙ্গে ছবি তুলেছি, তার পরিবারের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই আমার পারিবারিক সম্পর্ক। মেয়েটিকে আমি ছোট বোনের মতো। এখানে জোর করে ছবি তোলা হয়নি। আজও বোনের মতোই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে ছবি তুলেছি। এ ছবি তোলার সময় পাশেই তার মা, বাবা ও বড় ভাই ছাড়াও পাড়ার শত শত লোকজন ছিল। আমি যে ছবি তুলেছি তা নিয়ে তার পরিবারের বা পাড়ার কারও কোনো ধরনের আপত্তি ছিল না।