আমাকে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছিলো বাঁধন ও তার পরিবার: সনেট

আনুষ্ঠানকিভাবেই ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর ডিভোর্স হয়ে গেছে অভিনেত্রী বাঁধনের। বিষয়টি এতদিন গোপন ছিলো কেবল বাঁধনের দাম্পত্য জীবন ভালো যাচ্ছে না খবরের আড়ালে। তবে গেল ২১ সেপ্টেম্বর বাঁধনের স্বামী মাশরুর সিদ্দিকী এক আড্ডায় নিশ্চিত করেন ডিভোর্সের তথ্য। তিনি প্রমাণ হিসেবে বিচ্ছেদের সনদপত্রও দেন। আলাপচারিতায় বাঁধনের নামে নানা ধরনের অভিযোগ আনেন সনেট। তিনি বলেন, লোভী, সুকৌশলী নারীর মুখোশের আড়ালে মিষ্টি হাসির বাঁধনের প্রেমে পড়েছিলাম আমি। বাঁধনের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ওর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সেটা ছিলো আমার জীবনের জন্য দারুণ অশুভ এক ক্ষণ।

আমি ২০০২ সালে আর্মির চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামি। একসময় মনে হলো এমবিএ করবো। বনানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তিও হই। সেই ক্যাম্পাসেই ২০০৮ সালে পরিচয় ঘটে বাঁধনের সঙ্গে। এক পর্যায়ে ফোন নাম্বার দেয়া নেয়া। শুরু হয় কথা বলা। সে থেকে প্রেম। কদিন যেতে না যেতেই বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগে বাঁধন। আমিও ভাবলাম, জীবনটা গোছানো দরকার। দুই একটা সন্তান থাকলে জীবনটা বদলে যাবে একঘেয়েমি থেকে। আনন্দ আসবে। রাজি হলাম। হুট করেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেই আমরা। বাঁধনের বাবা আমাকে দেখতে আসেন। পছন্দ হলে বিয়ের দিন ঠিক হয়।

আমি বাঁধনকে বিয়ে করছি শুনে বাঁধনের ওই কাজিন, যে আমাকে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো সে অনুরোধ করলো বিয়েটা যেন না করি। বাঁধন লোভী মেয়ে, তার মধ্যে ঝামেলা আছে। কিন্তু আমি এসব শুনিনি। শোবিজে কাজ করে এমন অনেক পরিচিত লোক আমাকে না করেছিলো বিয়েটা করতে। কিন্তু আমি ওর প্রেমে অন্ধ ছিলাম। চেয়েছিলাম, ওকে নিয়ে সংসার করে সন্তান-সুখে আনন্দে থাকবে জীবনট। ভাবতেই পারিনি, এমন সুন্দর একটা মেয়ে এতোটা ধ্বংস করে দেবে আমাকে।

বাঁধন প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা হাত খরচ চাইতো দাবি করে সনেট বলেন, ‘বিয়ের পর ও আমাকে গ্রাস করতে থাকে। নানাভাবে মানসিক অত্যাচার করতে থাকে। সব ব্যায় মিটানোর পরও সে প্রতি মাসে সে হাত খরচের জন্য ১ লাখ টাকা চাইতো আমার কাছে। এটা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। আমার কিছু বিজনেস ছিলো। সেগুলোতে পার্টনারশিপ চাইতো বাঁধন। আমি বলতাম, এগুলো দিয়ে কী হবে। যা কিছু আমার সবই তো তোমার। তবুও সে কথা শুনতো না। এইসব নিয়ে প্রায়ই আমাদের ঝগড়া হতো।

সেই ঝগড়ার জের ধরেই বিচ্ছেদ হয়েছে দাবি করে সনেট বলেন, ঝগড়া করে বাঁধন চলে যায় তার বাবার বাসায়। তখন আমরা ভাড়া বাসায় গুলশানে থাকতাম। কিছুদিন পর সবকিছু মীমাংসা হলে আমাকে প্রেশার দিতে থাকে আমি যেন মিরপুরে ওর বাবার বাসায় গিয়ে থাকি। আমার বন্ধু-বান্ধবরা সবাই আমাকে না করেছিলো। কিন্তু সুখের দাম্পত্যের আশায় আমি বাঁধনের কথায় তাদের বাসায় গিয়ে উঠলাম।

সেই বাসায় যাবার পর সেখানে আমার প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে একটি আনরেডি ফ্ল্যাটকে তৈরি করে সেটিকে নতুন করে গুছাতে। বাসার ছাদে সুইমিং পুলও করেছিলাম। কিন্তু প্রতিনিয়তই ঝগড়া হতো। বাঁধন আমাকে ডিভোর্স দেবে বলে শাসাতো। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ডিভোর্সের আবেদন করি। কিন্তু সেটি গ্রহণ হয়নি। তার দুই-তিনদিন পরই সে আবেদন করে। এবং তার আবেদনেই ছাড়াছাড়ি হয় আমাদের। সেই বাসায় আমার লাখ লাখ টাকার ফার্নিচার, একটা পিয়ানোসহ আরও অনেক কিছুই ছিলো। সবকিছু রেখে আমাকে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছিলো বাঁধন ও তার পরিবার।

তার উপর হামলাও করেছিলো বাঁধনের পরিবার, এমনটা দাবি করে সনেট বলেন, ২০১৫ সালের কোরবানী ঈদের রাতে বাঁধনের ভাইয়েরা আমাকে মারধরও করেছিলো। আমি গিয়েছিলাম মেয়েকে দেখতে। তারা মেয়েকে দেখতে দেয়নি। এ নিয়ে তর্ক হলে তারা আমার গায়ে হাত তুলে। লাঠির আঘাতে আমার বাঁ পাশের বাহুর নিচের হাড় ভেঙে যায়। দীর্ঘদিন আমি চিকিৎসা নিয়েছি সরকারি হাসপাতালে। আমার কাছে সবকিছুর কাগজ আছে, প্রমাণ আছে।

হামলার পর আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে মামলা করতে গিয়েও হোচট খেলাম। পল্লবী থানায় মামলা নিচ্ছিলো না। বাঁধনের পরিবার আগে থেকেই আমার নামে জিডি করে রেখেছিলো। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমি মামলা করতে পেরেছিলাম। তারাও আমার নামে পাল্টা মামলা করলো নানারকম মিথ্যে অভিযোগ করে। বেশ কয়েকমাস হাইকোর্টে ছুটাছুটির পর বাঁধন নিজেই আমাকে মামলা তুলে নিতে অনুরোধ করলো। ও এবং তার পরিবার এতটাই ছোটলোক যে, ওর আইনজীবীর টাকাটাও সে আমার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে পরিশোধ করেছিলো। অথচ আমারই বিরুদ্ধে মামলা।

বাবা হওয়া সত্ত্বেও মেয়েকে আজকাল দেখতে দেন না বাঁধন, এমন অভিযোগ করেন সনেট। তিনি বলেন, আমি নি:সঙ্গ মানুষ। এক বড় ভাই ছাড়া আমার কেউ নেই। সারাজীবন চাকরি করেছি, ব্যবসা করেছি। কিন্তু খুব একটা আনন্দ পাইনি জীবনে। একটা বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেই সংসারটা ভেঙে যায়। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর বিয়ে করবো না। কিন্তু বাঁধনের প্রেম আমাকে আকৃষ্ট করেছিলো। আমিও উৎসাহী হলাম একটু হৈ চৈ করে বাঁচবো বলে। বাচ্চা-কাচ্চা ঘর আলো করে রাখবে। ভালোই লাগবে।

সেই প্রত্যাশারই ধন আমার একমাত্র মেয়ে সায়রা। এক জীবনে ওর চেয়ে আপন আমার আর কিছু নেই। মেয়েটাকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না। বারবার কথা বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু প্রতিদিন এক দুইবারের বেশি কথা বলতে পারি না। ওর মা দিতে চায় না। মাঝেমধ্যে মেয়েকে আমার কাছে নিয়ে আসি। কী যে আনন্দে কাটে সেই দিনগুলো, বলে বোঝাতে পারবো না। আল্লাহর রহমতে মেয়ে মায়ের কাছে থাকলেও আমার জন্য পাগল সে। দিনের পর দিন সে আমার সঙ্গে থেকে যায় মায়ের কথা মনেও করে না।

সেই মেয়েটাকে গেল কয়েকদনি ধরে কথা বলতে দিচ্ছে না। দেখা করতেও দিচ্ছে না। আগে আমার গাড়ি দিয়ে স্কুলে পৌঁছে দেয়া হতো। এখন আমার গাড়িটাও নিচ্ছে না। আমার মনে হয় বাঁধন মেয়েটাকে আটকে দিতে চায়। কিন্তু আমি তো ওর বাবা। ওকে কাছে পাবার, ওর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবার অধিকার রাখি আমি।

কী কারণে বাঁধন মেয়েকে আটকে রাখবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সনেট বলেন, ‘আমি মেয়েকে কানাডাতে পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছি। মেয়ের ভালোর জন্য। কারণ আমি জানি বাঁধন কতো নোংরা জীবনযাপন করে। ওর মানসিকতা কত ছোট। ও একটা শিক্ষিত মেয়ে। শোবিজে কাজ করে। অথচ ঘরের ভেতরে ওর ব্যবহার দেখলো লোকজন জ্ঞান হারাবে। কেউ বিশ্বাসই করতে পারবে না এটাই বাঁধন। সে বাসায় উঠতে বসতে সবাইকে ধমকায়। বাচ্চা বাচ্চা কাজের মেয়েগুলোকে অশালীন ভাষায় চুন থেকে পান খসলেই গালাগালি করে। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে কাজের মেয়েদের নিয়ে আমাকে অশ্লীল সব কথা বলতো। মা-বাবাকে যা খুশি তাই-ই বলে ফেলে। বস্তির মেয়েদের মতো ভাষা প্রয়োগ ও ব্যবহার।

ওর পরিবারের সবাই ওকে ভয় পায়। অকারণে চিৎকার করে। খবরদারি করে সবকিছুতে। এমন পরিবেশে আমি নিজেই তো থাকতে পারিনি। আমার মেয়েটাও তার কাছে মানুষ হবে না। আমি চাই মেয়েটাকে ভালো কোথাও রেখে পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করতে। কানাডায় আমার বর্তমান স্ত্রী থাকেন। তার কাছে রেখে ওকে পড়াশোনা করাবো ভাবছি। দরকার হলেও আমিও সেখানে চলে যাবো। আমার এক জীবনে আর কিছু প্রত্যাশা নেই। মেয়েটাকে মানুষের মতো মানুষ করে যেতে চাই।আমার বর্তমান কানাডায় ভালো একটি চাকরি করেন। সেই স্ত্রীর সঙ্গে আমার মেয়ের খুব ভালো সখ্যতা। এই বিষয়টাও পছন্দ করে না বাঁধন। মেয়ে তো আর আমার একার নয়। তারও মেয়ে। তবে সে কেন মেয়ের ভালো চাইবে না।

দেশেও তো মেয়েকে ভালো স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করানো সম্ভব। এখানে থাকতে অসুবিধা কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে সনেট বলেন, ‘আপনার বা আপনাদের কোনো আইডিয়া নেই বাঁধন কেমন মেয়ে। শোবিজের মানুষ বা দর্শক যেমন দেখে ঘরের বাঁধন তার সম্পূর্ণ উল্টো। আমি খোঁজ নিয়েছি, বাঁধনের বংশে সবচেয়ে উচ্চশিক্ষিত ছিলো ওর বাবাই। আমার প্রাক্তন শ্বশুর বুয়েটের ছাত্র ছিলেন। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করে অবসর নিয়েছেন।

উনি পড়াশোনা করে চাকরি করেছেন বলে ছেলেমেয়েকে ভালো স্কুল কলেজে পড়াতে পেরেছেন। কিন্তু স্বভাবে কেউ বাবার মতো হয়নি। না বাঁধন, না তার দুই ভাই। ওরা অনেক উগ্র। মিরপুরে যেখানে তারা থাকে তার আশপাশে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। বাঁধন এতটাই ছোট মানসিকতার, মেয়েকে স্কুলে আনা নেয়ার জন্য আমি গাড়ি দিয়েছি। সেই গাড়িকে ব্যবহার করে বাঁধন। মেয়ে স্কুলে চলে গেলে গাড়ি নিয়ে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায় সে। ভাবুন, একজনের সঙ্গে আমার ডিভোর্স হয়েছে, আমি কোন লজ্জায় তার জিনিসপত্র ব্যবহার করেবা! শুধু তাই নয়, মেয়েটাকে একটা পিজা খাওয়াতে নিয়ে গেলেও আমাকে ম্যাসেজ করে ‘টাকা পাঠাও’, এমন মানসিকতা ওর। অসংখ্য ম্যাসেজ আছে ম্যাসেঞ্জারে টাকা চাওয়ার।

আর এখনো সে আমাকে সম্পর্ক নতুন করে মীমাংসা করতে প্ররোচিত করে। কিন্তু সে জানে আমি আরেকটা বিয়ে করেছি। ম্যাসেঞ্জারে কদ্দিন আগেও টেক্সট করেছে যেন আপোষ করে ফেলি। আমার স্ত্রীকে কানাডায় কল করে গালাগালি করে, নানা কথা বলে বেড়ায় আমার বিরুদ্ধে। একদিকে সে আমাকে বলছে আসো আবার এক হই। অন্যদিকে সে অন্যজনের কাছে বলছে আমি নাকি ভালো না। চরিত্র খারাপ।

আমি আর্মিতে কাজ করে এসেছি। চরিত্র খারাপ হলে তার রিপোর্ট থাকবে। আমার বন্ধু মহল, উঠবস করার মানুষেরা তার সাক্ষী দেবে। যে কেউ চাইলে খোঁজ করে দেখতে পারে। দম ফেলে সনেট আরও বলে যান, খবর পেয়েছি আজকাল বাঁধন বেশ কিছু বেপরোয়া নতুন মডেল-অভিনেত্রীদের সঙ্গে মিশছে। নানারকম পার্টিতে যায়, রাত অব্দি থাকে। হৈ চৈ করে। আমার মেয়েও আমাকে কয়েকজনের নাম বলেছে। তার মা সম্পর্কেও অনেক কথা বলেছে। বাধ্য হয়েই আমি মেয়েকে তার কাছ থেকে দূরে রেখে মানুষ করতে চাই। মেয়ে বড় হলে সে তো আর তার মাকে ভুলে যাবে না। আর বয়সে আমি যেহেতু তার চেয়ে অনেক বড় স্বাভাবিক নিয়মে আমি তার আগেই চলে যাব পৃথিবী থেকে। মেয়ে মানুষ হলে, সফল হলে আমার চেয়ে সেই বেশি ফল ভোগ করবে। তিনি আরো বলেন, মেয়েকে স্বাভাবিকভাবে যদি কাছে না পান তবে সন্তানের অধিকার চেয়ে আদালতে মামলা করবেন সনেট।

প্রসঙ্গত, মাশরুর সিদ্দিকী সনেটের জন্ম টাঙ্গাইলে ১৯৬৫ সালে। তিনি ১৯৮৪ সালে আর্মিতে যোগদান করেন। ২০০২ সালে মেজর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। শুরু করেন নানামুখী ব্যবসায়। তিনি রাজধানীর অভিজাত রেস্তোরাঁ স্প্রেকট্রার পরিচালক। পাশাপাশি তার ইন্টেরিওর ডিজাইনিংয়ের ফার্ম আছে। বর্তমানে তিনি থাকে মিরপুর ডিওএইচএসে। সূত্রঃ পূর্ব-পশ্চিম

বাংলাদেশ সময় : ১৪৫৬ ঘণ্টা, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ

Scroll to Top