নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৯ জন। মিনিট পাঁচেকের ব্যবধানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ভয়াবহ সেই হামলার মুখে না পড়লেও নিহত হয়েছেন তিন বাংলাদেশি। তবে লিনউড মসজিদে হামলার পর এক তরুণ বন্দুকধারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে অনেকের প্রাণ বাঁচিয়েছেন ।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন সাহসী ওই তরুণ। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় যখন এই হামলার ঘটনা ঘটে তখন তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে বন্দুকধারী সঙ্গে খালি হাতে লড়াই করে অস্ত্র কেড়ে নেন। আর তার কারণেই প্রাণে বেঁচে যায় অনেক মানুষ। নইলে লিনউড মসজিদেও অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটতো।
সাহসী সেই তরুণ জুমার নামাজ পড়তে যান ওই মসজিদে। তার জন্য বেঁচে গেছে বহু মানুষের প্রাণ। অন্যথায় আরো মানুষের হত্যাকাণ্ড দেখতে হতো বিশ্ববাসীকে। নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যম হেরাল্ডকে সেই তরুণের গল্প শুনিয়েছেন ওই মসজিদ থেকে বেঁচে ফেরা সৈয়দ মাজহারউদ্দিন।
জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে এক অস্ত্রধারী হামলা চালায়। কাছের লিনউড মসজিদে যে দুই ব্যক্তি হামলা চালায় তাদের হাতে ছিল অটোমেটিক রাইফেল। নির্বিচারে গুলিতে আল নূর মসজিদে ৪১ জন এবং লিনউডে ৭ জন নিহত হন। হাসপাতালে মারা যান আরও একজন।
সৈয়দ মাজহারউদ্দিন বলেন, ‘তখন লিনউড মসজিদে ছিলেন ৬০ থেকে ৭০ জনের মত। আচমকা ভেতরে গুলি শুরু হয়। চারপাশের সবাই চিৎকার করে পালানোর চেষ্টা করে। ভয়ে লোকজন দিগ্বিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। আমি তখন লুকিয়ে পড়ার জায়গা খুঁজছিলাম। এ সময় দেখলাম এক লোক মসজিদের গেট দিয়ে ঢুকল।’
সৈয়দ মাজহারউদ্দিন আরও বলেন, ‘দরজার কাছে কয়েকজন বয়স্ক লোক ছিলেন। হামলাকারী তখন নির্বিচারে গুলি করতে থাকেন। এসময় সুযোগ বুঝে এগিয়ে আসেন সেই তরুণ। সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। আর হামলাকারীর হাত থেকে বন্দুকটা কেড়ে নেন।’
তিনি তরুণের সাহসিকতার কথা বলছিলেন, ‘বন্দুক হাতে পেলেও কিন্তু বন্দুকের ট্রিগারটা খুঁজে পাচ্ছিলেন না মসজিদের তরুণ। হামলাকারী সেই সুযোগে দৌঁড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান। তারপর বাইরে অপেক্ষায় থাকা একটি গাড়িতে উঠে পালিয়ে যান।’
আল নূর মসজিদের হামলার সময় তা ফেসবুকে লাইভ করা হচ্ছিল। আর সেটা করছিলেন খোদ হামলাকারী। হামলার পর খুব দ্রুত সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, অনলাইন ভিডিও গেমের স্টাইলে একজন বন্দুকধারী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি করছে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হামলাকারী এমন নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর আগে পুরো ঘটনাটি ভিডিও করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। মাথায় রাখা ক্যামেরার মাধ্যমে তিনি সেই হত্যাযজ্ঞের ভিডিওটি লাইভ করেন বলেও জানা গেছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সেই ১৬ মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, হামলাকারী মসজিদের ভেতরে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বেশ কয়েকটি বন্দুক নিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সামনে আগাচ্ছিলেন। যারা তার হামলা থেকে বাঁচতে মাটিতে শুয়ে পড়েন তাদের খুঁজে খুঁজে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করছিলেন।
হুইল চেয়ারে করে নামাজ পড়তে যাওয়া রমজান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি চারদিক থেকে চিৎকার ও কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। দেখি অনেকে মাটিতে মরে পড়ে আছে। অনেকে আবার ছোটাছুটি করছেন। আমি ছিলাম হুইলচেয়ারে বসা তাই আমার কোথাও যাওয়ার উপায় ছিল না।’
তিনি বলছিলেন, ‘আমার ডানপাশে আমি দেখতে পাই প্রায় ২০ জনের মত মানুষকে। যাদের অনেকে মরে পড়ে আছেন অনেকে আহত হয়ে চিৎকার করছেন। বামপাশে আরও দশজনকে দেখি যাদের বেশিরভাগই মৃত। আমি হামলাকারী ওই ব্যক্তিকে ভালোভাবে দেখতে পারিনি। তবে তার মাথায় হেলমেট বা এজাতীয় কিছু একটা ছিল।’