৫০ লাখ রুপির একটি ফ্লাট নিজের অধীনে নেয়ার জন্য নয়া দিল্লিতে একজন যুবতী তার প্রেমিকের সহায়তায় হত্যা করেছেন পিতামাতাকে। তাদেরকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হন নি তিনি। মৃত পিতামাতাকে সুটকেসের ভিতর ভরে তা ফেলে দিয়েছেন ড্রেনে। এ ঘটনা ঘটেছে দিল্লির পশ্চিম বিহারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এতে বলা হয়েছে ওই যুবতীর নাম দেবিন্দর কাউর (২৬)। তার ডাকনাম সোনিয়া। তিনি স্বামীকে ফেলে ফিরে যান পিতামাতার সংসারে।
তারপর প্রিন্স নামে এক যুবকের সঙ্গে তার প্রেম শুরু হয়। এক পর্যায়ে দেবিন্দর কাউর তার পিতামাতাকে চাপ সৃষ্টি করেন তাদের ৫০ লাখ রুপির ফ্লাটটি তার নামে লিখে দিতে। কিন্তু তারা অস্বীকৃতি জানান। দেবিন্দ্ররের মা জাগির কাউর (৪৩) তখন ছিলেন দূরে, পাঞ্জাব রাজ্যে। এ সময় সোনিয়া ও তার প্রেমিক প্রিন্স মিলে তার পিতা গুরুমিতকে চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করেন। এক পর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে বাড়ি ফিরে আসেন তার মা। তারা একই প্রক্রিয়ায় তাকেও হত্যা করেন। এরপর দুটি মৃতদেহই সুটকেসে ভরে ফেলে দিয়ে আসেন ড্রেনে।
পচন ধরা মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর এই ডাবল মার্ডারের কথা বেরিয়ে আসে। প্রথম মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয় শুক্রবার। ওইদিন পার্শ্ববর্তী নাঙ্গলোই সৈয়দ গ্রামের একটি ড্রেনে একটি সুটকেস ভাসতে দেখা যায়। তা উপরে তুলে দেখা যায় এর ভিতর একজন নারীর মৃতদেহ। তাকে সনাক্ত করা হয় জাগির কাউর (৪৩) হিসেবে। এরপর খবর বের হয় যে, জাগিরের স্বামী গুরমিটও নিখোঁজ। একই গ্রামে আরেকটি ড্রেনের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় আরেকটি সুটকেস। তার ভিতর উদ্ধার করা হয় গুরমিতের মৃতদেহ।
পুলিশ কর্মকর্তা সেজু কুরুভিলা বলেছেন, এ হত্যায় অভিযুক্ত হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে দু’জনকে। একজন হলেন নিহতদের মেয়ে দেবিন্দর কাউর ওরফে সোনিয়া ও প্রিন্স দীক্ষিত। এ ছাড়া আরো দু’জন পুরুষের সন্ধান চলছে।
এ নিয়ে তদন্তের শুরুতে নিহত দম্পতির কন্যা সোনিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে তিনি জানান যে, পিতামাতা যখন নিখোঁজ হন তখন তিনি দিল্লি ছিলেন না। কিন্তু সিসিটিভি ও তার ফোনকল ট্র্যাক করে দেখা যায় তার এ বক্তব্য সত্য নয়। ফলে অব্যাহত থাকে জিজ্ঞাসাবাদ। পরে সোনিয়া স্বীকার করেন যে, প্রেমিক প্রিন্সের সহায়তায় তিনি পিতামাতাকে হত্যা করেছেন।
সোনিয়া পুলিশকে বলেছেন, তিনি বিবাহিতা। আছে দুটি সন্তান। এক বছর আগে স্বামীকে ছেড়ে চলে এসেছেন পিতামাতার সংসারে। এখানে প্রিন্সের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রিন্স একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সোনিয়া বলেছেন, এক পর্যায়ে তিনি তার পিতামাতাকে তাদের সহায় সম্পত্তি তার নামে লিখে দিতে বলেন। কিন্তু তারা সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু ওই ফ্লাটটি পেতে বেপরোয়া হয়ে পড়েন সোনিয়া।
তাই তিনি প্রিন্সকে সঙ্গে নিয়ে পিতামাতাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। গত মাসে সোনিয়ার নানা মারা যান। এ ঘটনায় তার মা জাগির পাঞ্জাবে বলে যান পিতার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে, যা হয় ২০ শে ফেব্রুয়ারি।
এর পরের দিন পিতা গুরজিতকে ঘুমের ওষুধ সেবন করান তিনি চায়ের সঙ্গে। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এ সময় প্রেমিক প্রিন্সকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তার শ্বাসরোধ করেন। মারা যাওয়ার পর পিতা গুরমিটের দেহ একটি সুটকেসে ভরে ফেলে দিয়ে আসেন নাঙ্গলোইয়ের ড্রেনে।
২রা মার্চ বাসায় ফিরে যান সোনিয়ার মা জাগির। তার আগে পর্যন্ত প্রিন্স পালিয়ে থাকেন । এক পর্যায়ে মা জাগিরকেও ঘুমের ওষুধ সেবন করিয়ে একই কায়দায় হত্যা করেন তারা। তারপর একই এলাকায় নিয়ে ড্রেনে ফেলে আসেন। এ কাজে তাদেরকে সহায়তা করেছে আরো দু’জন ব্যক্তি। পুলিশ তাদের খুঁজছে।