ব্রিটিশ পার্লামেন্টে চূড়ান্ত ভোটের আগে একেবারে শেষ মুহুর্তে এসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছ থেকে ব্রেক্সিটের আইনী বাধ্যবাধকতার আশ্বাস আদায় করে নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে।
মে-র ব্রেক্সিট চুক্তি গ্রহণ করা হবে কি হবে না, মঙ্গলবার এ বিষয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট চূড়ান্ত ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ফের ভোট দেয়ার হুমকি দেয়া বিদ্রোহী সাংসদদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টার অংশ হিসেবেই সোমবার তিনি এ আশ্বাস আদায় করে নিলেন।
চলতি মাসের ২৯ মার্চ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইইউ জোটের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার কথা। ওই বিচ্ছেদ ‘চুক্তিসহ’ নাকি ‘চুক্তি ছাড়াই’ হবে, সে বিষয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।
আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে আইনী আশ্বাস আদায়ে মে সোমবার ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ জাঙ্কারের সঙ্গে স্ট্রাসবার্গে বৈঠক করেন, সেখানেই দুই পক্ষ এ বিষয়ে একমত হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রক্ষণশীল (টোরি) দলে থাকা ব্রেক্সিটপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী মে-র সঙ্গে ই্ইউর সমঝোতা নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে আসছে। মে ইউরোপের নেতাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বলেও অভিযোগ তাদের।
সোমবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যে আশ্বাস আদায় করে নিয়েছেন, তা ১৫ জানুয়ারির ভোটের পরাজয়ের ধাক্কা উৎরে পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন আদায়ে যথেষ্ট হবে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
জানুয়ারির ভোটে মে-র পক্ষে ছিলেন ২০২ সাংসদ; বিপক্ষে ৪৩২। ২৩০ ভোটের এ ব্যবধান টপকাতে হলে ব্রেক্সিট নিয়ে এ চূড়ান্ত ভোটে মে-কে আরও অন্তত ১১৬ সাংসদের সমর্থন পেতে হবে।
বিচ্ছেদ কার্যকরে যে সময়সীমা আছে তার ঠিক ১৭ দিন আগে সোমবার রাতে জাঙ্কারকে পাশে নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ আমরা কিছু আইনী পরিবর্তন নিশ্চিত করতে পেরেছি। এখনই সময় একত্রিত হয়ে ব্রেক্সিট চুক্তির এই অগ্রগতিকে সমর্থন জানানো এবং ব্রিটিশ জনগণের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী তা (ব্রেক্সিট) কার্যকর করা।”
নভেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যে সমঝোতা হয়েছিল, সেখানে ‘আইরিশ ব্যাকস্টপ’ নিয়ে ব্রিটিশ সাংসদদের যে আপত্তি তা নিরসনে যৌথ দলিল, যৌথ বিবৃতি ও একটি ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মে।
যুক্তরাজ্যের প্রদেশ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ডের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ এড়াতে আইনী বাধ্যবাধকতার বিষয়টিই ‘ব্যাকস্টপ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্ত এটি যুক্তরাজ্যকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কক্ষপথে পরিণত করবে বলে অনেক ব্রিটিশ সাংসদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঙ্কার সতর্ক করে বলেছেন, ভোটে এই চুক্তি না উৎরালে ‘তৃতীয় কোনো সুযোগ’ নাও পাওয়া যেতে পারে।
“কোনো তৃতীয় সুযোগ নেই। কালকের অর্থপূর্ণ ভোট যদি ব্যর্থ হয়, এই ব্যাখ্যাগুলোর পর আর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হবে না, এই আশ্বাসের পর আর কোনো আশ্বাসও দেয়া হবে না। হলে এই চুক্তিতেই হবে না হলে সামগ্রিকভাবে ব্রেক্সিটই হয়তো হবে না,” বলেছেন তিনি।