মহিউদ্দিনকে অনুসরণ করুন, আতিকুলকে প্রধানমন্ত্রী

আতিকুল ইসলামকে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো সিটি করপোরেশন পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, নিজেদের উপার্জন সক্ষমতা বাড়িয়ে নিজস্ব তহবিলে উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে শপথ গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং উত্তর ও দক্ষিণের নব নির্বাচিত কাউন্সিলররা শপথ নেন।

তিনি বলেন, কেবল একটি মাত্র সিটি করপোরেশন তারা নিজের পায়ে সম্পূর্ণভাবে দাঁড়িয়েছিল। যখন মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। তিনি খুব দক্ষতার সাথে সেটা পরিচালনা করেছিলেন এবং সম্পূর্ণ নিজের উপার্জনে তার চলার মতো দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। এখন যত প্রজেক্ট আসছে, আমরা করে দিচ্ছি কিন্তু সব সময় সরকার করবে না। স্থানীয় সরকার নিজেদেরই করতে হবে। সেটাই আমার অনুরোধ থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর ও এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিভক্তি করেছি। এতে অনেকেই আপত্তি করেছিলেন কিন্তু আমি মনে করি, এখন যতই দিন যাচ্ছে, যত মানুষ সুবিধা ভোগ করতে পারবে, তখন এর সুফলও বুঝতে পারবে। এটা পৃথিবীর সকল মেগা সিটিতেই করা হয়। এছাড়াও, আরও দুটি বিভাগ করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্যটা হলো জনসেবাটা যেন জনগণের দোঁরগোড়ায় দ্রুত পৌঁছায়। মানুষ যেন একটা জায়গায় গিয়ে তার সমস্যার কথা বলতে পারে এবং সমাধানের পথ পায়। আর উন্নয়নটা যেন আরও ত্বরান্বিত হয় এবং সুষম হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কিন্তু এই পদক্ষেপগুলো নিয়েছি। কারণ আমাদের প্রত্যেকটি পদক্ষেপ হচ্ছে জনগণের জন্য, প্রতিটি পদক্ষেপ হচ্ছে মানুষের কল্যাণে। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ হচ্ছে দেশের উন্নয়নে।

ঢাকা সিটির যোগাযোগ খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও যানজট নিরসন করে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে বিভিন্নভাবে উন্নয়ন করে কাজ করে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন যে ইউনিয়নগুলো যুক্ত হলো, সেগুলোতে ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি একটি পরিকল্পিত পরিকল্পনা নিতে।

দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক নিয়ম-কানুন মেনে জনগণকে রাস্তা পারাপার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যারা রাস্তা পার হয় কোন ট্রাফিক রুল মানে না। অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেলো, এতো বড় একটা আন্দোলন হয়ে গেল। তারপরও কেন জানি মানুষ সচেতন না।

ফুটওভার ব্রীজ করা আছে, আন্ডারপাস করা আছে। দরকার হলে আরও করে দেবো। কিন্তু প্রত্যেককে এটা মেনে চলতে হবে। যত্রতত্র এটা মাথায় রাখতে হবে একটা গাড়ি বা বাস যেটাই চলুক না কেন, সেটা একটা যন্ত্র, হাত দেখালেই থামতে পারে না। ব্রেক কষতে কষতেও কিন্তু সময় লাগে। সেই জিনিসটা মাথায় রেখে চলতে হবে বলেও জানান তিনি।

এছাড়াও জনপ্রতিনিধিদের স্কুল-কলেজ ছুটির সময় শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং লোক নিয়োগ করে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।

স্বাধীনতার পূর্ব থেকে বর্তমান পর্যন্ত রাজধানীতে বসবাসের ফলে নাগরিক হিসাবে নিজের স্মৃতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও এখানে আমার জন্ম না। কিন্তু সেই ১৯৫৪ সাল থেকে এখানে বসবাস করি। স্বাভাবিকভাবে এই সিটির উপর আমাদের একটা আলাদা টান আছে। তাছাড়া আন্দোলন সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন তার সূতিকাগার ঢাকা। আর আমি কিন্তু দক্ষিণেও থেকেছি উত্তরেও থেকেছি। মানুষের সেবার জন্য, সুবিধার জন্য যদিও উত্তর দক্ষিণে ভাগ করেছি। কিন্তু শহর হিসাবে এটা আমাদের শহর। কাজেই শহরকে সুন্দরভাবে পরিচ্ছন্ন রাখা, মানুষের জীবনমান যেন উন্নত হয় সেই চেষ্টা করছি। আর আপনারাও তা করবেন। আর জনগণ যে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে ভোট দিয়েছে,সেই বিশ্বাসের মর্যাদা আপনারা দেবেন, সেটাই আমি চাই।

এর আগে শপথ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এবং ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের) নির্বাচিত কাউন্সিলরা। মেয়রকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি’র মেয়র পদে, দু’টি ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচন ও নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের সাধারণ নির্বাচন ও ডিএসসিসি’র নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আতিকুলসহ নবনির্বাচিতদের শপথ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব এসএম গোলাম ফারুক।

Scroll to Top