‘হঠাৎ একটি বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ির ওপর বড় আগুনের গোলার মতো কী যেন পড়ল। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ড্রাইভারকে বের হতে দেখে আমিও পেছনের বাঁপাশের দরজা খুলতে গেলাম। ততক্ষণে গাড়িতে আগুন ধরে গেছে। দরজা জ্যাম, খুলল না। কোনো রকমে সামনের খোলা দরজা দিয়ে বের হয়েই দিলাম দৌড়।
পেছনে না ফিরে প্রাণটা নিয়ে কেবল ছুটেছি’, মাহবুবুর রহমান এভাবেই চকবাজার আগুনের কবল থেকে বেঁচে ফেরার রোমহর্ষক বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
বুধবার রাতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নি কাণ্ডের কবলে পড়েছিলেন তিনিও। জীবন বাজি রেখে কোনো রকমে হায়দার বক্স লেনের খালার বাসায় আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বাঁচেন।
মাহবুবুর বলেন, ‘ওই রাতে পেছনে না তাকিয়ে প্রাণপণে ছুটেছিলাম বলেই হয়তো বেঁচে আছি। আজ গাড়িটা দেখতে এলাম। পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে এটি। বসে থাকলে আমার পরিণতিটাও এমন হতে পারত।’ চুড়িহাট্টার পাশেই ৫৭ নন্দকুমার দত্ত রোডের ‘তাসলিমা হাইট্স’-এ মাহবুবুর রহমানের বাসা।
বুধবার রাতে শান্তিনগরে এক আত্মীয়কে রেখে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। চুড়িহাট্টা মসজিদের কাছে প্রতিদিনের মতোই জ্যামে আটকে পড়ে তার গাড়ি। এর কিছুক্ষণ পরই ঘটে ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সাদা রঙের টয়োটা অ্যাকুয়া (ঢাকা মেট্রো গ-৩৪০১৭৩) প্রাইভেট কারটি ছিল হাইব্রিড (জ্বালানি তেলে চালিত) বলে জানান চালক মো. ইউসুফ। তাই গাড়িতে কোনো গ্যাস সিলিন্ডার ছিল না।
ইউসুফ বলেন, ‘বিস্ফোরণটা ঠিক কোথায় হইছে দেখতে পারি নাই। তবে আমাদের সামনেই হইছে। শব্দ শুনেই আমি স্যারকে বের হতে বলি। আমি নিজেও বের হয়ে যাই।’ ওই রাতের কথা মনে করতেই গায়ে কাঁটা দেয় বলে জানান মাহবুবুর। বলেন, ‘দরজাটা যখন জ্যাম দেখলাম, এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল-আর বাঁচব না! এখানেই আমার শেষ।
সাহস করে সামনের দরজা দিয়ে বের হই। চারপাশের একের পর এক বিস্ফোরণ আর আগুনের কুণ্ডলি দেখে ভরকে যাই। কিছু ভাবার আগে মাথায় এলো, যে করেই হোক দৌড়াতে হবে। রাস্তার সব বাধা টপকে প্রাণপণে হায়দার বক্স লেনের দিকে ছুটলাম। তবে বিশ্বাস হচ্ছে না বেঁচে আছি। গাড়িটির পরিণতি দেখে বারবার মনে হচ্ছে, এখানেই হয়তো পাওয়া যেতো আমার ছাই।’