পুলওয়ামার ঘটনায় পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে গেছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরে সিআরপিএফের গাড়িবহরের ওপর চালানো ওই হামলায় ৪৪ জন নিহত হয়েছিল।
এ হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে শক্ত বদলা নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। সেই সাথে তিনি সেনাবাহিনীকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও পাল্টা জবাবে বলেছিলেন, যদি আক্রান্ত হয়া তাহলে পাকিস্তানও বসে থাকবে না। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কাশ্মির ইস্যুতে দুইবার এই দুটি প্রতিবেশী দেশ যুদ্ধে জড়িয়েছে।
ফলে আবারো যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে কি না দুই দেশ তা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে দুই পক্ষের সামরিক শক্তির ব্যাপারে কিছু তথ্য দেয়া হলো-
সামরিক বাজেট : ২০১৮ সালে ভারত তাদের ১৪ লাখ সদস্য বিশিষ্ট সামরিক বাহিনীর জন্য বাজেটে ৫৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে, যা তাদের জিডিপির দুই দশমিক এক শতাংশ। অন্যদিকে একই বছরে ছয় লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ সদস্যের সামরিক বাহিনীর জন্য ১১ বিলিয়ন ডলারের সামরিক বাজেট দেয় পাকিস্তান। এটি পাকিস্তানের জিডিপির তিন দশমিক ছয় শতাংশ। একই বছর তারা বিদেশ থেকে ১০ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য পেয়েছে।
১৯৯৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে পাকিস্তানের বার্ষিক সরকারি খরচের ২০ শতাংশ সামরিক বাহিনীর পিছনেই ব্যয় হয়েছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা সিপ্রি এ তথ্য জানায়। সিপ্রি আরো জানায়, ২০১৭ সালে যেখানে পাকিস্তানের সরকারি খরচের ১৬ দশমিক সাত শতাংশ সামরিক বাহিনীর পিছনে ব্যয় হয়েছে। একই সময় ভারত তাদের সামরিক বাহিনীর পেছনে ব্যয় করে তাদের সরকারি খরচের নয় দশমিক এক শতাংশ।
ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু অস্ত্র : উভয় দেশের হাতেই পরমাণু ওয়ারহেড বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক মিসাইল রয়েছে। ভারতের হাতে তিন থেকে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষে আঘাত হানার মােত ক্ষেপণাস্ত্রসহ নয় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের হাতে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে সেগুলো স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার হলেও ভারতের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম। ভারতের শাহিন-২ দুই হাজার কিলোমিটার দূরে আঘাত হানতে পারে। সিপ্রি জানায়, পাকিস্তানের কাছে ১৪-১৫০টি পরমাণু ওয়ারহেড রয়েছে। এক্ষেত্রে ভারতের হাতে রয়েছে ১৩০-১৪০টি।
সেনা জনবল : ভারতের ১২ লক্ষ সেনা সদস্য রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে তিন হাজার ৬৫৬টি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, তিন হাজার ১০০টি যুদ্ধযান, ৩৩৬টি আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার এবং নয় হাজার ৭১৯টি আর্টিলারি। পাকিস্তান স্বাভাবিকভাবেই এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। তাদের পাঁচ লাখ ৬০ হাজার সেনাসদস্য রয়েছে। রয়েছে দুই হাজার ৪৯৬টি ট্যাঙ্ক, এক হাজার ৬০৫টি আর্মর্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার এবং চার হাজার ৪৭২টি আর্টিলারি। ভারতের সেনাসংখ্যা বেশি হলেও সহযোগী অন্যান্য বিষয়ের দিক দিয়ে তুলনামূলকভাবে তারা পিছিয়ে রয়েছে।
বিমানবাহিনী : এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ সদস্য এবং ৮১৪টি যুদ্ধবিমান নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই তাদের আয়তন পাকিস্তানের চেয়ে বড় কিন্তু তারা তাদের যুদ্ধবিমানগুলো নিয়ে চিন্তিত। চীন ও পাকিস্তানের মতো দুই বৈরি প্রতিবেশীর জন্য বিমানবাহিনীকে যেভাবে প্রস্তুত রাখা দরকার ছিল, ভারতের ক্ষেত্রে তা হয়নি। বরং তাদের যুদ্ধবিমানের মধ্যে এমন অনেকগুলো রয়েছে, যা ১৯৬০ সালে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল।
তবে ভবিষ্যতের চিন্তা করে এক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে ৪২৫টি যুদ্ধবিমান। এগুলোর মধ্যে চীনের তৈরি এফ-সেভেনপিজি এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন রয়েছে। তবে যুদ্ধ লাগলে এগুলো দিয়ে উৎড়ানো যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত পাকিস্তানও। ফলে তারাও এ বাহিনীকে আধুনিকায়নের দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
নৌবাহিনী : ভারতের নৌবাহিনীর মধ্যে একটি বিমানবাহী রণতরী, ১৬টি সাবমেরিন, ১৪টি ডেস্ট্রয়ার, ১৩টি ফ্রিগেট, ১০৬টি টহল যান রয়েছে। এ বাহিনীর হাতেও ৭৫চি যুদ্ধবিমান রয়েছে। ভারতীয় নৌসেনার সংখ্যা ৬৭ হাজার ৭০০। অন্যদিকে পাকিস্তান এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। তাদের হাতে নয়টি ফ্রিগেট, ৮টি সাবমেরিন, ১৭টি টহল যান এবং আটটি যুদ্ধবিমান রয়েছে।
সংখ্যার দিকে দিয়ে ভারত পাকিস্তানের তুলনায় অনেক এগিয়ে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রেক্ষাপটে বিচার করলে দুয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া পাকিস্তানই এগিয়ে থাকবে। কারণ বাহিনী বিশাল হওয়ার কারণে ভারত ইচ্ছে করলেই পুরো বাহিনীকে আধুনিকায়ক করতে পারে না। ফলে তাদের অনেক অস্ত্রই মান্ধাতার আমলের। এখন সত্যিকার লড়াইয়ে নামতে হলে সেগুলো বিপদেরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সূত্র : দ্য নিউজ