দীর্ঘ নয় বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজের প্রথম ম্যাচে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ। পচেফস্ট্রমের সেনউইজ পার্ক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় দুই দলের মধ্যে টস হবে। ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর ২টায়।
প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ :
তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুমিনুল হক/লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, তাইজুল ইসলাম/মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ।
দুর্বলতা মেনেও প্রত্যাশায় ভালো কিছু
প্রতিটা সিরিজের আগে আইসিসির একটা রুটিন ইনফরমেশন থাকে। সেটা র্যাংকিং। কে জিতলে কী হবে। কোন রেজাল্টে কার অবস্থান কোথায় দাঁড়াবে সে পরিসংখ্যানটা জানিয়ে দেয় তারা। দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশ সিরিজের বেলাতেও তাই। র্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার (১১০ রেটিং) সামনে নয়ে থাকা বাংলাদেশ (৭৪ রেটিং)। এ সিরিজ থেকে যদি একটি পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারেন মুশফিকেরা তাহলে আটে চলে যাওয়ার সুযোগ। এক্ষেত্রে পেছনে চলে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ অর্জনও হবে এটা। চট্টগ্রামে সর্বশেষ টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারালেও সেটা হয়ে যেত, কিন্তু হয়নি। এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় হবে তো! আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে এক পয়েন্ট ছিনিয়ে আনা বিশাল চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার। এমনটা কেউ মনেও করে না। প্রোটিয়া যখন নিজ মাঠে খেলবে,তখন এমন আশাতে নিরাশ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবু আশা করতে তো দোষ নেই।
আজ পচেফস্ট্রুুমে শুরু হতে যাওয়া টেস্টম্যাচ নিয়ে কিছুটা হলেও উত্তাপ বিরাজ করছে। সেট অবশ্য বাংলাদেশকে কেন্দ্র করেই। সা¤প্রতিকালে যে পারফরম্যান্স করছে মুশফিকেরা তাতে দক্ষিণ আফ্রিকায়ও সেটা অব্যাহত রাখবেন কি না সেটাই দেখার বিষয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার কিছুটা টেনশনও রয়েছে। নতুন কোচ ওটিস গিবসন ভাবছেন তার পেস ডিপার্টমেন্ট নিয়ে। ক্রিস মরিস, ফিল্যান্ডার ও ডেল স্টেইন নেই স্কোয়াডে। কাগিসো রাবাদা ও মরনে মরকেল অভিজ্ঞ বোলার। এ ম্যাচে তারা কতটা নিজেদের মেলে ধরতে পারবেন সেটা দেখার বিষয়। চিন্তা আছে তাদের টপঅর্ডার নিয়েও। এমনিতেই এ বি ডিভিলিয়ার্স নেই। নতুন অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসিস। তার ক্যাপ্টেন্সি তো বটেই এরই সাথে প্রোটিয়া টপঅর্ডার কতটা মেলে ধরতে পারবেন নিজেদের সেটাও চিন্তার কারণ তাদের। ওপেনিংয়ে নতুন এসেছেন মার্করাম। এ ম্যাচেই অভিষেক হতে যাচ্ছে তার। ফলে তার পারফরম্যান্সটাও পরখ করে দেখার ব্যাপার।
হোমে খেলা হলেও একেবারেই যে নির্ভার তারা, সেটা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ দল একটা ফরম্যাটের মধ্যে রয়েছে। যেখানে সফলতা আসছে। যদিও স্পিনারদের ওপর নির্ভর করেই ছিল সে সব সাফল্য। তাই বলে বাংলাদেশের পেস অ্যাটাক মোটেও পিছিয়ে থাকার মতো নয়। মোস্তাফিজ, তাসকিন, শফিউল, রুবেলদের সাথে আছেন শুভাশিষ রায়। এ সফরে পাঁচজন পেসার রয়েছেন বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে। আর যাদের বেশ কিছু দিন থেকেই তালিম দিয়ে যাচ্ছেন ক্যারিবিয়ান সাবেক ফাস্ট বোলার কোর্টনি ওয়ালশ। ভয়টা তাদের এখানেই। ওয়ালশ তো এমনি এমনিতেই সেরা ফাস্ট বোলারদের কাতারে যাননি। তার অভিজ্ঞতা যখন নতুন প্রজন্মের সাখে শেয়ার করে তাদের গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে ভালো কিছু হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে। বিশেষ করে কিক করছে না ব্যাটসম্যানদের ব্যাট। এটা হোমেই বরং বেশি হচ্ছে, কিন্তু নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় ভালো ব্যাটিং করার নজির রয়েছে। তবে ব্যাটসম্যানদের যথেষ্ট যোগ্যতা রয়েছে। বিশেষ করে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সাথে সৌম্য সরকার। ওয়ান ডাউনে ইমরুল কায়েস। চারে যদি খেলানো হয় মুমিনুলকে তবে তিনিও। এরপর মুশফিক, সাব্বির রুম্মন প্রতিটা ব্যাটসম্যানেরই বড় ইনিংস খেলার যোগ্যতা রয়েছে, এমনকি বড় পার্টনারশিপেরও রয়েছে অভিজ্ঞতা। এরা যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে লড়ে যেতে পারেন, তাহলে চ্যালেঞ্জিং একটা স্কোর গড়া মোটেও অসম্ভব না। সব মিলিয়ে আশা করতেই পারে বাংলাদেশ ভালো কিছুর। আর সেটা নির্ভর করছে যদি খেলোয়াড়েরা তাদের যোগ্যতা অনুসারে পারফরম্যান্স করতে পারেন।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিক এ সিরিজ নিয়ে আশাবাদী। অল রাউন্ডার সাকিব না থাকা দলের জন্য কিছুটা মাইনাস পয়েন্ট হলেও সেটা পুষিয়ে দেয়ারও ক্ষমতা আছে দলের, এমনটাই তিনি মনে করেন। এ জন্য প্রয়োজন সবার যোগ্যতা অনুসারে পারফর্ম করা। বাংলাদেশ দলে টিকে থাকাটাও এখন বড্ড চ্যালেঞ্জিং। পারফরম্যান্স না করলে স্কোয়াডে থাকা নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে হয়। ক্রিকেটারেরা সেটা জানেন। ফলে নিজেদের সেরাটা দেয়ার নিমিত্তেই মাঠে নামবেন এটাই স্বাভাবিক।
মুশফিক বলেন, সাম্প্রতিককালের পারফরম্যান্সটা ধরে রাখা বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকান কন্ডিশন বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে এটা অসম্ভব কিছু না বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন কী হয় সেটা মাঠেই প্রমাণের অপেক্ষা থাকবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৩৩৫ ঘণ্টা, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ