বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ৮ উইকেটের বড় জয় পেল নিউজিল্যান্ড। সফরকারীদের দেয়া ২২৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের ৮৩ বল বাকি থাকতেই জয়ের লক্ষে পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা। আর জয়ের মধ্যে দিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজটি নিজেদের করে নিল কিউইরা। কিউইদের উইকেট দুটি নিয়েছেন মুস্তাফিজ।
সিরিজের প্রথম ম্যাচটিও ৮ উইকেটে জিতেছিলো কিউইরা। শনিবার নেপিয়ারে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। সেই ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৩২ রান করেছিলো টাইগাররা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের ৩৩ বল বাকি থাকতেই জয় পেয়েছিলো নিউজিল্যান্ড।
শনিবার ( ১৬ ফেব্রুয়ারি) সিরিজ জেতার মিশনে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে নিউজিল্যান্ড। শুভসূচনা এনে দেন মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। তাতে বাদ সাধেন মোস্তাফিজুর রহমান। নিকোলসকে লিটন দাসের তালুবন্দি করে ফেরান তিনি।
তবে থেকে যান গাপটিল। তার ঝড় চলেই। ব্ল্যাক-ক্যাপস ওপেনারের টর্নেডোতে খড়কুটোর মতো উড়ে যান টাইগার বোলাররা। পথিমধ্যে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। মাত্র ৭৬ বলে ১১ চার ও ৪ ছক্কায় তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন ডানহাতি বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি।
এ নিয়ে ব্যাক টু ব্যাক তিন অংক ছোঁয়া ইনিংস খেলেন গাপটিল। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১১৭ রানে অপরাজিত থেকে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন তিনি। অবশ্য শতকের পর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি এ ওপেনার। মোস্তাফিজের বলে ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে খেলেন ৮৮ বলে ১৪ চার ও ৪ ছক্কায় ১১৮ রানের অনবদ্য ইনিংস।
শনিবার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে টস জিতে প্রথমে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। শুরুতেই পেস তোপে পড়ে টাইগাররা। মাত্র ১ রান করে ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হয়ে ফেরেন লিটন দাস। এরপর বৃষ্টির বাগড়ায় মিনিট দশেক খেলা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়। পরক্ষণেই ম্যাট হেনরির বলে এলবিডব্লিউ হন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার।
১৬ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দলকে খেলায় ফেরাতে স্বাভাবিক খেলার চেষ্টা করেন সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহিম। ভালোই খেলছিলেন তারা। তবে হঠাৎই পথচ্যুত হন সৌম্য। কলিন ডি গ্রান্ডহোমের বলে ওয়াইড স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা রস টেইলরকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ২৩ বলে ২২ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটার।
ঠিক পরের ওভারে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিক। তবে ব্যক্তিগত ১৫ রানে টেইলরের কল্যাণে দ্বিতীয়বারের মতো লাইফ পান তিনি। দুইবার জীবন পেয়েও ৩৬ বলে ২৪ রানের বেশি করতে পারেননি মিস্টার ডিপেন্ডেবল। লুকি ফার্গুসনের গতিতে খেই হারিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ছয় নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে টম অ্যাস্টলের বলির পাঁঠা হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এতে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
৯৩ রানে ৫ উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন মোহাম্মদ মিঠুন। তাকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন সাব্বির রহমান। দুজনে বিপর্যয় সামাল দেন। তাতে এগোচ্ছিল সফরকারীরা। ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি তুলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মিঠুন। তবে আচমকা ছন্দপতন। টম অ্যাস্টলের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৬৯ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫৭ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন এ মিডলঅর্ডার। তাতে ভাঙে ৭৫ রানের জুটি।
শেষদিকে ভরসা হয়ে ছিলেন সাব্বির। শুরু থেকেই ভালো খেলছিলেন। কিন্তু হঠাৎই স্তব্ধ হয়ে যান তিনি। ফার্গুসনের বলে জেমস নিসামের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন এ হার্ডহিটার। সাজঘরে ফেরার আগে ৬৫ বলে ৭ চারে লড়াকু ৪৩ রান করেন তিনি। তার আগে নিসামের শিকার বনেন মিরাজ।
সাব্বিরের বিদায়ের পর লেজের ব্যাটসম্যানরা প্রত্যাশিত ব্যাটিং করতে পারেননি। ফার্গুসনের বলে সোজা বোল্ড হয়ে ফেরেন গেল ম্যাচে দারুণ খেলা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে নিসামের শিকার হয়ে ফেরেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। শেষ পর্যন্ত ৪৯.৪ ওভারে ২২৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। কিউইদের হয়ে ফার্গুসন নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন অ্যাস্টল ও নিশাম।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির রহমান, সাইফউদ্দিন, মেহেদী মিরাজ, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মোস্তাফিজুর রহমান।
নিউজিল্যান্ড একাদশ: মার্টিন গাপটিল, হেনরি সিকোলস, কেন উইলিয়ামসন, রস টেলর, টম লাথাম, জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্রান্ডহমি, টড অ্যাস্টেল, লকেই ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি ও ট্রেন্ট বোল্ট।