নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী কে এই টিপু মুনশি?

হাল আমলে বাংলাদেশের সজ্জন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অন্যতম। ১৯৫০ সালের ২৫ আগস্ট রংপুরের পীরগাছা উপজেলার গুয়াবাড়ি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম রমজান আলী মুনশি ও মায়ের নাম রত্না মুনশি। সৎ এই রাজনীতিবিদ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পোশাক শিল্পের ব্যবসার পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেন।

চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বঙ্গভবনে নতুন বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন টিপু মুনশি। রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এ শপথ বাক্য পাঠ করান। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টিপু মুনশি রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে থেকে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এমদাদুল হক ভরসা ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৭৭ ভোট। এর আগে ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত টিপু মুনশি বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক এবং ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও অন্যতম উদ্যাক্তা হিসাবে সিপাল গ্রুপের এমডি পদে রয়েছেন। তিনি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রংপুর-৪ আসন

১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৬টি আসনের ৬টিতেই জয়লাভ করে জাতীয় পার্টি। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালের উপ-নির্বাচনে রংপুর-২ ও রংপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভ করেন এবং সেবারই প্রথম মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে স্থান পান রংপুর-২ আসনের পরলোকগত আনিসুল হক চৌধুরী এবং রংপুর-৫ আসনের এইচএন আশিকুর রহমান।

২০০৮ সালে ছন্দপতন ঘটে। সেবার ৬টি আসনের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ জয় পেয়ে তাদের আধিপত্য জানিয়ে দেয়। ভাঙতে শুরু করে জাপার দুর্গখ্যাত রংপুর। সেই জয়ের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৪টি আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই ৪টি আসন ধরে রাখে দলটি। এর মধ্যে টিপু মুনশির রংপুর-৪ অন্যতম।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

১৯৭২ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮১ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বাণিজ্য বিভাগ ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগ নামে দু’টি বিভাগে বিভক্ত করা হয়। ১৯৮২ সালে শিল্পের সাথে একীভূত হয়ে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সে সময় বাণিজ্য বিভাগ, শিল্প বিভাগ এবং পাট বিভাগ এ মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত করা হয়। ১৯৮৫ সাল থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হিসেবে পুনঃকার্যক্রম শুরু হয়।

সরকারি কার্যপ্রণালী বিধিতে বাণিজ্য এবং বাণিজ্যর সাথে সম্পর্কিত ৩১ ধরনের কাজকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত করা হয়। এ কাজগুলো মূলতঃ অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান রাখা এবং সম্প্রসারণে সহায়তা, আমদানি বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করা, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায়ে রাখা, পণ্য ও সেবা রফতানির বাজার সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ ও রফতানির স্বার্থে দরকষাকষি করা, ব্যবসা সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন, পণ্যের ট্যারিফ নির্ধারণ, বাণিজ্য সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম, তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ, বিসিএস (ট্রেড) ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।

স্পষ্টভাষী ও মহানুভব টিপু মুনশি

গত ১৬ জানুয়ারি রংপুর প্রেসক্লাব আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে টিপু মুনশি বলেন, ‘আমি প্রথম এমপি নির্বাচিত হয়ে জীবনের প্রথম সম্মানীর পুরো টাকাটা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শংকু সমাজদার মা’র হাতে দিয়েছিলাম। গত দশ বছরে এমপি হিসেবে যত বেতন ভাতা পেয়েছি সবই দুস্থ, অসহায় শিক্ষার্থীদের দিয়েছি। আমার কোন চাওয়া নেই। মানুষের জন্যই আমি আমার জীবন উৎসর্গ করতে চাই। সবাইকে সুন্দর ও সম্প্রতিময় জীবন উপহার দিতে চাই।’

Scroll to Top