খুন করে স্বামীর লাশ ৬ টুকরো, হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা স্ত্রীর

জনাকীর্ণ এলাকায় বাঁশঝাড়ের সামনে আবর্জনার স্তূপে রক্তভেজা বস্তায় বাঁধা মানবদেহের একটি টুকরা। এর প্রায় ৪০০ গজ দূরে শৌচাগারের পেছনে পায়ের অংশের দুই টুকরা, পাশেই ময়লা ফেলার একটি ড্রামের ভেতর দুই হাত ও খণ্ডিত মাথা।

ভয়ংকর এমন দৃশ্য ছিল গতকাল শুক্রবার গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার গিলারচালায়। খবর পেয়ে পুলিশ বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম শেখ (৩০)। তিনি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার উলমাকান্দি গ্রামের আবদুল লতিফ শেখের ছেলে। রফিকুল পাশের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার হাউ আর ইউ কারখানায় চাকরি করতেন। পাশের গিলারচালার ব্যবসায়ী আবদুল হাইয়ের বাড়ির একটি কক্ষে তিনি সস্ত্রীক ভাড়া থাকতেন। চার বছর বয়সী তাঁদের একটি মেয়ে রয়েছে।

বীভৎস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী জেবুন নাহারসহ দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। জেবুন নাহার (২৭) ওই এলাকার মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেডের শ্রমিক। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বর্বরতম ওই হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন জেবুন নাহার। আজ শনিবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চেয়েছেন বলে জানান শ্রীপুর থানার এসআই শহিদুল ইসলাম মোল্লা।

পুলিশকে জেবুন নাহার জানান, স্বামী রফিকুল ইসলামের পাশাপাশি তিনিও চাকরি করেন। যা বেতন পান তা থেকে প্রতি মাসে নিজের মা-বাবাকে কিছু টাকা দিতে চাইতেন তিনি। কিন্তু বাদ সাধেন রফিকুল। এমনকি ওই সব ঘটনায় তাঁকে বিভিন্ন সময় মারধরও করতেন। ফলে স্বামীর ওপর মাসখানেক ধরে প্রবল আক্রোশ পোষণ করছিলেন তিনি। ফের ঝগড়া হলে ওই আক্রোশে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে স্বামীকে হত্যা করেন। এখানেই থেমে থাকেননি। স্বামীর মরদেহে ঠাণ্ডা মাথায় চালান নৃশংসতা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেবুন নাহার জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয় তাঁর। ঝগড়ার একপর্যায়ে ইট দিয়ে রফিকুল ইসলাম শেখের মাথায় আঘাত করেন তিনি। এতে রফিকুল জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সময় তিনি গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রফিকুলকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর স্বামীর মরদেহ ঘরে ওয়ার্ডরোবে ভরে রেখে কর্মস্থলে চলে যান জেবুন নাহার। এই খুনের ঘটনার সময় তাঁদের শিশুসন্তান ছোট বোনের বাসায় (পাশের কক্ষ) ছিল। রাত ৮টার দিকে কর্মস্থল থেকে ফিরে ১১টা পর্যন্ত তিনি বোনের বাসায় থাকেন। সেখানেই রাতের খাবার খান জেবুন। রাত ১১টার দিকে নিজের বাসায় গিয়ে ঘণ্টাখানেক বঁটিতে শাণ দেন। এরপর ওয়ার্ডরোব থেকে স্বামীর মরদেহ বের করে প্রথমে দুই পা কাটেন। পরে কাটেন দুই হাত। একপর্যায়ে মস্তকও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এভাবে মরদেহ ছয় টুকরা করে সেগুলো গুম করার উদ্দেশ্যে একটি বস্তায় ভরেন। দুই হাত ও খণ্ডিত মাথা ময়লা ফেলার ড্রামের ভেতর ফেলেন। পরে বাসা থেকে কয়েক শ গজ দূরে বাঁশঝাড়ের সামনে ময়লার স্তূপে লাশের টুকরাসহ বস্তাটি ফেলে আসেন। এর প্রায় ৪০০ গজ দূরে শৌচাগারের পেছনে নিয়ে ফেলেন পায়ের দুটি টুকরা। পাশেই দুই হাত ও খণ্ডিত মস্তক রাখা ড্রামটিও ফেলে যান। নৃশংসতায় ব্যবহৃত বঁটিটিও বাইরে লুকিয়ে রাখেন জেবুন নাহার।

এসআই শহিদুল ইসলাম মোল্লা জানান, জেবুন নাহারের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গতকাল রাতেই নৃশংসতায় ব্যবহৃত বঁটিটি জব্দ করা হয়েছে।

প্রতিবেশী ভাড়াটে জোহরা খাতুন জানান, গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পাশে সবজিক্ষেতে সবজি তোলার সময় বাঁশঝাড়ের সামনে আবর্জনার মধ্যে রক্তাক্ত চটের বস্তা দেখতে পান। এর প্রায় ৪০০ গজ দূরে মরদেহের পায়ের দুটি টুকরা দেখে তিনি চিৎকার দেন।

শ্রীপুর থানার এসআই শহিদুল ইসলাম মোল্লা জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে টুকরা দেহাংশগুলো উদ্ধার করে। এরপর পাশে ময়লা ফেলার ঝুড়ি থেকে দুই হাত ও মরদেহের খণ্ডিত মস্তক উদ্ধার করা হয়। পরে বাড়ির মালিকসহ প্রতিবেশীরা মরদেহটি রফিকুল ইসলাম শেখের বলে শনাক্ত করে। তিনি জানান, ঘটনার পর থেকে নিহত রফিকুলের শ্যালিকা স্বামীসহ পালিয়ে গেছেন।

এদিকে শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম দাবি করেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন জেবুন নাহার। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেবুন নাহার তা স্বীকার করেছেন। জেবুন নাহার একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।’

Scroll to Top