\’আমার বাপটা আর নেই\’

ফোনের অপর প্রান্ত থেকে শোনা যাচ্ছে কারো হাউমাউ কান্নার শব্দ। মিনিট দুয়েক বাদে কান্নার ফাঁকে সালমা বারবার অস্পষ্ট করে বলে যাচ্ছিলেন- \’আমার বাপটা আর নেই ভাইয়া। আমার বাপটা আর নেই।’

সুরকার-গীতিকার ও সংগীতশিল্পী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন আরেক সংগীত শিল্পী ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সালমা আক্তার। ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার সময় থেকেই আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুুলের সঙ্গে সালমার বাবা-মেয়ে সম্পর্ক।

সালমার কন্ঠে মুগ্ধ হয়ে তাকে মা বলে ডাকতেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সালমাও ডাকতেন বাবা। রক্তের সম্পর্কে নেই বটে, কিন্তু সুরের জালে দুই শিল্পীর সম্পর্ক বুনে যায় পিতার স্নেহে আর সন্তানের শ্রদ্ধায়। টেলিফোনের ওপারে তাই সালমার কান্না থামতে চায় না।

নিজেকে একটু ধাতস্থ করে সালমা ফিরে যান ক্লোজআপ ওয়ানের দিনগুলোতে। ২০০৬ সালে ওই প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। সালমা বলেন, \’আমার গান শোনার পর প্রথম যখন উনি বললেন \’তুমি দারুণ গেয়েছো মা\’, সেই মুহূর্তে অন্য রকম একটা অনুভূতি হচ্ছিলো আমার। এর আগে আমাকে অনেকেই মা বলে ডেকেছেন। কিন্তু তাদের আমি বাবা ডাকিনি। কিন্তু ওনার মা ডাক শোনার পরে মনে মনে আমি তাকে বাবা ডেকেছিলাম।

‘আমি এরপর থেকে আরও দায়িত্ব নিয়ে পারফর্ম করতে আরম্ভ করি। কারণ যখনই গান করতাম, মনে হতো আমাকে আরও ভালো করে গাইতে হবে, কারণ বিচারকের আসনে বসে আছেন আমার বাবা।’

তার এই বাবা আর নেই পৃথিবীতে, নরম করে তাকে আরও কেউ বাবা ডাকবে না এটা বিশ্বাস করতে পারছেন না সালমা। টেলিফোনের এপার থেকে শোনা যায় তার দীর্ঘশ্বাস। কান্নার ঢেউ সামলানোর চেষ্টাও। বলেন, \’সময়ে-অসময়ে যে মানুষটা মন দিয়ে আমার কথা শুনত, নানা পরামর্শ দিত, সেই বাবা আর নেই, এই শূন্যতা নিয়ে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে এখন। এই শহর থেকে আমার সবচে বড় ছায়াটা নিরুদ্দেশ যাত্রায় গেল। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষত হয়ে থাকবে।’

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুুলকে কখনো কোনো অন্যায় কিংবা কারও মনে কখনো কোনো কষ্ট দিতে দেখেননি সালমা, \’আমার বাবা ছিলেন একজন মাটির মানুষ। তার কাছে সুরের বাইরে আর কিচ্ছু ছিলো না। আমি মাঝে মাঝে জোরে কথা বললে বাবা বলতেন, \’মা গো, সুরের মানুষকে সুরে কথা বলতে হয়\’। এটা তার শিক্ষা। আমি একাধারে বাবা হারিয়েছি, বন্ধু হারিয়েছি এবং হারিয়েছি একজন শিক্ষককে।

Scroll to Top