টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে জয়ের বিকল্প ছিল না খুলনা টাইটানসের। সেই লক্ষ্যে লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছিল মাহমুদউল্লাহ বাহিনী। ব্যাটসম্যানরা ঠিকই নিজেদের কাজটা সেরে রেখেছিলেন। তবে বোলাররা পারলেন না। ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, অ্যালেক্স হেলসদের বুকে বিন্দুমাত্র ভয় ধরাতে পারেনি জুনায়েদ-ইয়াসিররা।
ফলে ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। রংপুর রাইডার্সের কাছে ৬ উইকেটে হেরে বিপিএল-২০১৯ থেকে বিদায় নিল টাইটানসরা।
বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে পয়েন্ট টেবিলে তলানিতে পড়ে ছিলো খুলনা টাইটান্স। কোন ম্যাচেই তারা ঠিক ঠাক সমন্বয় করতে পারে নি। এক ম্যাচে নাজমুল শান্ত বাদ তো পরের ম্যাচে আবার দলে। বাদ পড়ছেন স্টারলিং তো টেইলর দলে। মালিঙ্গাকে দলে নিয়েছেন। আবার বসিয়েও রেখেছেন। দল না জেতায় তাদের সমন্বয়ে এমন হতশ্রী দশা ছিলো দলের।
গেলবারের চ্যাম্পিয়ন রংপুরের অবস্থাও ভালো ছিলো না। সবশেষ বিপিএলে মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) দিনের প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্স ও খুলনা টাইটানস মুখোমুখি হয়।
প্রথমে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছেন রংপুরের অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা। ফলে খুলনাকে আগে ব্যাট করতে মাঠে নামতে হবে।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।
১৮২ রানের বড় লক্ষ্য দিয়েও হেলস-গেইল আর ডি ভিলিয়ার্সের তাণ্ডবের কারণে জয় তুলে নিতে পারেনি খুলনা। মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুর ম্যাচটা জিতেছে ৩ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওপেনিংয়েই দলকে দারুণ সূচনা এনে দেন অ্যালেক্স হেলস আর ক্রিস গেইল। গেইল অবশ্য পাওয়ার প্লের প্রথম ছয় ওভার একেবারেই মারেননি। সঙ্গী হেলসকে স্ট্রাইক দিয়েছেন বারবার। ৬ ওভারে রংপুর তুলে ৫৮ রান। এর মধ্যে হেলসেরই ছিল ৫৪, গেইলের মাত্র ৪।
অষ্টম ওভারে এসে ছক্কা শুরু করেন গেইল। ইয়াসির শাহর ওই ওভারের প্রথম দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকান ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব। ওই ওভারেই চতুর্থ বলে বিধ্বংসী হেলসকে বোল্ড করেন ইয়াসির। ২৯ বলে ৮ বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কায় হেলসের ব্যাট থেকে আসে ৫৫ রান।
এরপর নেমে তাণ্ডব শুরু করেন ডি ভিলিয়ার্স। মাত্র ২৫ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায় ৪১ রান করা ভিলিয়ার্সকে এলবিডব্লিউ করে ঝড় কিছুটা থামান মাহমুদউল্লাহ।
কিন্তু গেইল তো রয়েই গিয়েছিলেন। বাকি সময়টায় তাণ্ডব চালানোর কাজটা সেরেছেন তিনি। ৩৯ বলে ২ বাউন্ডারি আর ৫ ছক্কায় ৫৫ রানে থাকা গেইলকে শেষ পর্যন্ত ফেরান জুনায়েদ খান। তবে ততক্ষণে রংপুরের জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে।
গেইল আউট হওয়ার পর শেষ ৮ বলে ১১ রান দরকার ছিল রংপুরের, শেষ ওভারে দরকার ছিল ৬ রান। ইয়াসির শাহর ওই ওভারের প্রথম বলে ডাউন দ্য উইকেট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যান মোহাম্মদ মিঠুন (১৫)। তবে রাইলি রুশো মাথা গরম করেননি। ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন তিনি (৩ বলে ১০)।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় খুলনা। মাশরাফির শিকারে পরিণত হন আল-আমিন। দ্বিতীয় উইকেটে ব্র্যান্ডন টেইলরকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। কিন্তু হঠাৎই হার মানেন তিনি। ফরহাদ রেজার বলে রাইলি রুশোকে ক্যাচ দিয়ে ফেরত আসেন বাঁহাতি ওপেনার।
২৯ রানে টপঅর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান হারালে রানের গতি শ্লথ হয়ে গিয়েছিল খুলনার। পরে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে খেলা ধরেন ব্র্যান্ডন টেইলর। প্রথমে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে তোলেন তারা। ক্রিজে সেট হলে ছোটাতে থাকেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি। চেষ্টা করেন দ্রুত রান তোলার। তাতে ঘটে বিপত্তিও।ক্রিস গেইলের বলির পাঁঠা বনেন টেইলর। ফেরার আগে ২০ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন এ জিম্বাবুইয়ান। এই আউটের পর নজর কাড়ে ক্যারিবীয় দানবের উদ্যাম ড্যান্স।
টেইলর ফিরলেও রান বাড়ানোর ভিত পেয়ে যায় খুলনা। তাতে এসে জ্বালানি জোগান মাহমুদউল্লাহ। নাজমুল হোসেনের সঙ্গে তুখোড় জুটি গড়ে তোলেন তিনি। দুজনই বইয়ে দিতে থাকেন রানের নহর। রংপুর বোলারদের ওপর চালান স্টিম রোলার। এতে রানের চাকা ঘুরে বনবন করে। তবে হঠাৎই থেমে যান খুলনা অধিনায়ক। ফরহাদ রেজার শিকার হয়ে ২০ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ব্যক্তিগত ২৯ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি নাজমুলও। পরের বলেই কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। এবারের বিপিএলে শুরু থেকেই রানখরায় ভুগছিলেন এ ব্যাটার। এদিন দুর্দশা কাটিয়েছেন। ফিরেছেন ২ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়ে। ৩৫ বলে ২ চারের বিপরীতে ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে ৪৮ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটার।
পরক্ষণেই ফরহাদের চতুর্থ শিকার হয়ে ফেরেন আরিফুল হক। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ১৮১ রান তুলতে সক্ষম হয় খুলনা। তা সম্ভব হয়েছে শেষ দিকে ডেভিড উইজের টর্নেডো ব্যাটিংয়ের কারণে। মাত্র ১৫ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি।
রংপুরের হয়ে ৪ ওভারে ৩২ রানের বিনিময়ে ৪টি উইকেট নেন ফরহাদ রেজা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এটি তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। দুর্দান্ত বল করেন মাশরাফিও। ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান খরচায় ১ উইকেট নেন তিনি।