প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সন্তান যেতে পারবে না কেজিতে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের সন্তানদের কিন্ডার গার্টেন বা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পড়া বন্ধ করতে পূর্বের একটি নির্দেশনা আবারও চালু করতে যাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে একই লেসন প্ল্যান বা পাঠ পরিকল্পনা চালু করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, যার মাধ্যমে একই সময়ে সব স্কুলে একই পাঠদান হবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত এবং দুর্নীতি রোধে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন।

মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকা জেলার সাভার, ধামরাই, দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী ও সচিব। 

 একই লেসন প্ল্যান

সচিব বলেন, সারাদেশে একই লেসন প্ল্যানে পড়ানো হবে। নেপকে (জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি) দিয়ে লেসন প্ল্যান তৈরি করিয়েছি। এটা চূড়ান্ত করার পরে প্রত্যেক স্কুলে পাঠিয়ে দেবো। বাংলাদেশের প্রত্যেক স্কুলের লেসন প্ল্যান হবে এক রকম।

 ‘অর্থাৎ ঢাকার নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে পাঠদান হবে পঞ্চগড়ের একটা প্রত্যন্ত স্কুলের বাংলায় সেই একই পাঠ হবে।’

 এতে মনিটরিং সহজ হবে জানিয়ে সচিব বলেন, স্কুলে গিয়ে কর্মকর্তারা মনিটরিং করবেন যে টিচারের কোনটি পড়ানোর কথা ছিল, তিনি কোথায় পড়াচ্ছেন। মনিটরিংয়ের মাধ্যমে করাপশনকে জিরো করার জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। রমজান মাসে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়মানুযায়ী সারাদেশে একই নিয়মে যেমন তারাবির নামাজ হয়, সে রকম।

 মনিটরিং সুবিধার জন্য এমনটি করা হবে জানিয়ে সচিব বলেন, মনিটরিং কার্যক্রমটা জোরদার করতে হবে। উপজেলায় যেসব কর্মকর্তা আছেন, তাদের একেকটা স্কুলের মেনটর নিয়োগ করতে পারি। এই দায়িত্ব অর্পণ করা হলো।

 তিনি বলেন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা প্রত্যেক জেলায় একজন করে মেন্টর নিয়োগ করেছি। নিজের জেলা মাগুরা ও পাশের জেলা যশোরের দায়িত্বে সচিব। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে নিজ জেলা অথবা তার পাশের জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাবনা জেলায় মহাপরিচালককে দায়িত্ব দিয়েছি।

 সচিব বলেন, জিরো টলারেন্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন- এটা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত নিশ্চিত করা হবে।

শিক্ষকদের সন্তানরা পড়তে পারবে না কেজিতে

সচিব বলেন, আমাদের সার্কুলার আছে যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান যারা আছে তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়েই পড়তে হবে, আমরা সেটা আবারও তাদের স্মরণ করিয়ে দেবো।

 ‘অর্থাৎ আমরা আবার নিশ্চিত করবো যে, কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচারদের ছেলেমেয়েরা কিন্ডার গার্টেনে পড়তে পারবে না। এটা কঠিন হলেও আমরা করবো। ‘

 প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা কঠিন। তবে আমরা এমন সিস্টেম চালু করতে যাই, যেন কেজির বাচ্চারা আমাদের এখানে আসে।

 ভিডি কনফারেন্সে ওপারের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি লক্ষ্য করছি বাচ্চারা প্রাইমারিতে পড়ে না খালি কেজি স্কুলের দিকে যায়। এটার হেতু কী? কেজি স্কুলের মাস্টাররাতো বেতনও পান না, আপনারা যতটা পান। আমার দাদা প্রাইমারির শিক্ষক ছিলেন, ভাঙা সাইকেল, বেড়ার সঙ্গে লাগানো থাকতো। সব সাইকেল নিতাম, ওই মাস্টারের সাইকেল নিতাম না, কিছু দূর গেলে চেইন পড়ে যেতো। আজকে আপনাদের সেই ভাঙা সাইকেল নাই। এখন সবার মোটরসাইকেল…।

 ‘ভবিষ্যতে যেন কেজি স্কুলের ছেলেরা আপনার স্কুলে যেতে চায়, আপনার স্কুলের ছেলেরা কেজিতে যেতে না যায়…।’

এসময় কনফারেন্সের ওপাশ থেকে একজন বলেন, শুরু হয়ে গেছে।

 জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধন্যবাদ আপনাদেরকে। আর যে স্কুল এটা করতে পারবেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের পুরস্কৃত করবো।

 বাচ্চাদের বইয়ের বোঝা কমানোর বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটা বাচ্চার পক্ষে ওতোগুলো বই। বইগুলো নিতে ওদের কষ্ট হয়। আমরা চাইছি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করলে কেজির বইয়ের ভার কমবে।

 সভায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

Scroll to Top