বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, মিথ্যা জয়ের জন্য ভোট জালিয়াতি করতে পানির মতো টাকা খরচ করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পিছনে। তারাই একতরফা নির্বাচনের মুখ্য উপাদান হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশে আর গণতন্ত্রের গৌরবোজ্জ্বল যুগ সৃষ্টি হলো না। শেখ হাসিনার দল মানুষের ভোটে নয়, জিতেছে গায়েবি ভোটে।
তিনি বলেন, এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে নতুন সরকার গঠন হবে তা হবে গভর্নমেন্ট অব দ্য বিজিবি, বাই দ্য র্যাব অ্যান্ড ফর দ্য পুলিশ। এই মহাডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে এরা ক্রমান্বয়ে উপহাস করছে। আওয়ামী নেতারা এখন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চাপাবাজি ও গলাবাজির জোরে ভোট নিয়ে মহা-জালিয়াতির ঘটনা আড়াল করতে চাচ্ছে। কিন্তু দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে কিছুই এড়ায়নি।
বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের চাইতেও কুৎসিত। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর দেশ আরও একধাপ তমাসাচ্ছন্ন বর্বর যুগে প্রবেশ করলো। নির্বাচনের নামে নিষ্ঠুর রসিকতা করে এখন জনপদের পর জনপদে ধানের শীষের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর চলছে পৈশাচিক বর্বরতা। ভেঙে ফেলা হচ্ছে নিরীহ মানুষের ঘর-বাড়ি, দোকান, বাজার। করা হচ্ছে অগ্নিসংযোগ। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ঘর ছাড়া, এলাকা ছাড়া, গ্রেফতারের রীতিমতো হিড়িক শুরু হয়েছে। নানা হয়রানিসহ শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। অনেকে নিহত হয়েছেন। ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান-কৃষি খামার-সহায়-সম্পদের ওপর বেপরোয়া হানা দেয়া হচ্ছে অবিরাম।
তিনি বলেন, সবচেয়ে মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীতে। সেখানে এক সিএনজি চালকের স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণ ধর্ষণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ১০/১২ জন কর্মী নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার মধ্যব্যাগারে ৪ সন্তানের জননী ও সিএনজি চালকের স্ত্রীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে বলে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে ওই নারী সবার সামনে ধানের শীষে সিল দেন। এরপর রাত ১০টার দিকে সন্ত্রাসীরা পুলিশ পরিচয়ে তার বাড়িতে ঢুকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাতভর ধর্ষণ করে ঘরের পাশে ফেলে যায়। তিনি এখন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এটি শুধু একজন নারীকেই নয়, জনগণের ভোটাধিকারকেই শ্লীলতাহানি করা হলো।
রিজভী বলেন, ওই গৃহবধূর ক্রন্দন বিশ্ব বিবেককে কাঁদিয়েছে। বাংলাদেশে মানবতা এখন কাঁদছে। বিশ্ব মানবতা এই ঘটনায় স্তম্ভিত। কালো টাকার প্রাচুর্য প্রয়োগে বেড়ে ওঠা এই আওয়ামী নির্যাতনকারীরা জাল ভোটের মহাযজ্ঞের পর এখন কাণ্ডজ্ঞানহীন নিষ্ঠুর বেপরোয়া। এরা ভোট ডাকাতির মহাসাফল্যে সহজাত বিচার-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে। এরা মনুষ্যত্ব বির্সজন দিয়ে এখন নারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, গত ১০ বছরতো আওয়ামী লীগই ক্ষমতায়, তাহলে মিথ্যা জয়োল্লাসের বহিঃপ্রকাশে এতো হিংসার ছবি কেন? এরা ধারাবাহিকভাবে অশান্তি জিইয়ে রেখে মানুষের জাগরণকে ঠেকানোর চেষ্টা করবে। সেজন্য তারা দর্শন হিসেবে বেছে নিয়েছে সন্ত্রাসবাদ। তবে তাদের মনে রাখতে হবে পতন কিন্তু দিনক্ষণ-তারিখ-মাস ঘোষণা দিয়ে আসে না।
রিজভী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ অতীতে কখনও ক্ষমতায় আসেনি। স্বাধীনতার পর থেকে জনগণের ভোটে কখনও আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়নি। এবারও আওয়ামী লীগের কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। প্রত্যেক এলাকায় ইউএনও ও থানার ওসি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। যারা বলছেন শন্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে হয় তারা উৎকোচ নিয়েছেন, না হলে জ্ঞানপাপী।
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/বিএনকে