মানব জাতির ইতিহাসে মহররম বিশেষত আশুরার ফজিলত অপরিসীম। এই পবিত্র মাসের ১০ তারিখে মহান আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করেন।
দুনিয়ার প্রথম মানব-মানবী হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) শয়তানের ধোঁকায় পড়ে তাঁরা নিষিদ্ধ গন্দম ফল খেয়ে আল্লাহর দেওয়া কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হন। তাঁদের জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়।
আল্লাহর নির্দেশ ভঙ্গের অপরাধের ক্ষমা পেতে দিনের পর দিন আহাজারি করেন হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)। মহররমের ১০ তারিখে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন। মহররম ও এ মাসের ১০ তারিখ অর্থাৎ আশুরা ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে উঠেছে কারবালার প্রান্তরে বিপথগামী শাসক ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর হাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের শাহাদাত বরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সঙ্গেও মহররম তথা আশুরার সম্পর্ক রয়েছে। মূর্তি-পূজারী রাজা নমরুদ আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত করেন। আল্লাহর নবীকে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করতে চেয়েছিল রাজা নমরুদ। কিন্তু আল্লাহ আশুরার ১০ তারিখে তাঁর প্রিয় নবী ও বান্দাকে রক্ষা করেন আগুন থেকে। রাজা নমরুদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়।
হজরত নূহ (আ.)-এর নবুয়তের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে ১০ মহররমের স্মৃতি। এ তারিখে মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি পায় হজরত নূহ-এর আমলের মানুষ। নূহ (আ.)-এর কিস্তি এই পবিত্র দিনে মাটি স্পর্শ করে। মাটিতে মানুষ আবার আবাদ শুরু করার সুযোগ পায়। হজরত সুলাইমান (আ.) মহররম মাসের ১০ তারিখে তাঁর রাজত্ব ফিরে পান। ফেরাউনের দম্ভ চূর্ণ হয় মহররম মাসের ১০ তারিখে। ফেরাউন মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের মিসর ত্যাগের অনুমতি দিলেও তার বাহিনীকে মুসা (আ.)-এর পেছনে লেলিয়ে দেন। তারা ধাওয়া করে হজরত মুসা (আ.) এবং তাঁর অনুসারীদের।
আল্লাহ তাঁর নবীর দোয়া কবুল করে সে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন। সাগরের মাঝে রাস্তা সৃষ্টি হয় আল্লাহর কুদরতে। সে রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যান হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা। ফেরাউন বাহিনী তাদের পিছু নিলে সাগরের পানি তাদের গ্রাস করে। রসুল (সা.)-এর নাতি ইমাম হোসাইন কারবালার প্রান্তরে শহীদ হয়ে মানুষের হৃদয়ে আদর্শবাদিতার যে পতাকা উড্ডীন করেন তা চিরঅম্লান থাকবে।
ইয়াজিদের মনগড়া শাসন ব্যবস্থার বিরোধিতা করে তিনি মুসলিম জাতির জন্য কেয়ামত পর্যন্ত এক জ্বলন্ত উদাহরণ রেখে গেছেন। তার ওই আত্মত্যাগের ফলে এ কথাই প্রমাণিত হয়েছে যে, ইয়াজিদের শাসন ব্যবস্থা প্রিয় নবীজীর আদর্শের অনুকূলে ছিল না। তিনি তার মোকাবিলা না করলে ইয়াজিদের শাসন ব্যবস্থার পক্ষে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ইজমা ছিল বলে প্রমাণিত হতো। পবিত্র আশুরার দিনে রসুলে কারীম (সা.)-এর এ মহান দৌহিত্রের শাহাদাত যুগে যুগে মুসলিম জাতিকে দীনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কোরবানির প্রেরণা জোগায়। মহররমকে কেন্দ্র করে অনেকে অবাঞ্ছিত কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নেন। এটি মোটেও উচিত নয়। লেখক : ইসলামী গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে