কোচিং সেন্টারে ২০ ছাত্রীকে ধর্ষণ, শিক্ষককে নিয়ে তোলপাড়

লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় পরিমল জয়ধর চরিত্রধারী এক কলেজশিক্ষককে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

ইতোমধ্যে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে ওই শিক্ষকের অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আলিমুদ্দিন কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মেহেদি হাসান সুমন কোচিং সেন্টারের আড়ালে ওসব ছাত্রীর সর্বনাশ করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

গত শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে ওই শিক্ষকের কিছু আপত্তিকর ছবি প্রকাশ পায়। তাৎক্ষণিক ওই ছবিগুলো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে ওই শিক্ষককে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। পাশাপাশি ওই শিক্ষকের শাস্তি চেয়ে অনেকেই রাস্তায় নামেন।

গতকাল রোববার দুপুরে ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগ ও কলেজ ছাত্রদল। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন কলেজ প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মেহেদি হাসান সুমন। কলেজের পাশে একটি রুম ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টার দিয়ে প্রাইভেট পড়ান। ওখানে প্রাইভেটের আড়ালে অসংখ্য ছাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ করেন সুমন। তবে এ নিয়ে লোকলজ্জায় কোনো ছাত্রী এখনও অভিযোগ করেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষকের অপকর্ম ধরতে ওই কোচিং সেন্টারের কক্ষে গোপন ক্যামেরা লাগানো হয়। ওই ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করা হয়।

মূলত গত শনিবার হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মশিউর রহমান মামুনের দেয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে এলাকাজুড়ে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।

তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘হাতীবান্ধার আলোচিত পরিমল জয়ধর ওরফে সুমন মাস্টারের মুখোশ আর উম্মোচিত হচ্ছে না। কারণ ওই গুন্ডা মাস্টারের লালসার শিকার হওয়া কলেজছাত্রীরা আত্মসম্মানের ভয়ে এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না। তবে ভুক্তভোগী কেউ যদি আমাদের (ছাত্রলীগ) কাছে সাহায্য চায়, তার পরিচয় গোপন রেখে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’

ছাত্রলীগ সভাপতির দেয়া এমন ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা মন্তব্য করেছে। সেখানে একজন মন্তব্য করেন, ‘শুনেছি ভিডিও আছে। তা থাকলে ভুক্তভোগীদের প্রয়োজন হয় না। যার কাছে ভিডিও আছে তিনি সাহায্য করলেই হয়।’

স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক মন্তব্য করেন, ‘আমিও একজন শিক্ষক। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বলে- এমন কাজ কোনো শিক্ষকের হতে পারে না। সে মানসিক বিকারগ্রস্ত। উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে তাকে বিচারের আওতায় আনা হোক।’

কেউ কেউ কলেজশিক্ষক সুমানের ছবিও ফেসবুক মন্তব্য অংশে আপলোড করেছেন। আর অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এমন ঘটনায় চুপ থাকার বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সমালোচনা করেছেন।

স্থানীয় সূত্রমতে, হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মেহেদি হাসান সুমন কলেজের পাশে কোচিং সেন্টার খোলেন। সেখানে তিনি ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ান। কোচিং সেন্টারের আড়ালে সেখানে তিনি অপকর্মের আড্ডাখানা গড়েন। একপর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে একাধিক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন তিনি।

দিনের পর দিন শিক্ষকের হাতে এভাবে ২০ জন ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে পরিবার ও সম্মানের ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন এক ছাত্রী।

ওই ছাত্রীর অভিযোগ, শিক্ষক সুমনের হাতে এভাবে অনেক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। সম্প্রতি কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে অশ্লীল ছবি প্রকাশ হওয়ায় বিষয়টি সবার নজরে আসে। সেই সঙ্গে হাতীবান্ধাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী বলেন, ছাত্রীদের সঙ্গে ওই শিক্ষকের অশ্লীল ভিডিওচিত্র এক পক্ষের হাতে আছে। আর সেই পক্ষ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি চেপে যাচ্ছেন।

তবে এসব বিষয় অস্বীকার করে শিক্ষক মেহেদি হাসান সুমন বলেন, আমি এসবের কিছুই জানি না। যারা ফেসবুকে এসব ঘটনা রটাচ্ছে তারা পারিবারিকভাবে শত্রুতা করে এমনটি করছে।

তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই পারিবারিকভাবে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।

হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজ অধ্যক্ষ সারওয়ার হায়াত খান বলেন, এ বিষয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘণ্টা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ

Scroll to Top