ভাবুন নায়ক রাজ্জাকের তখন মাত্র ১৯ বছর বয়স। বাবা-মাকে ছোটবেলায় হারিয়েছেন। তিন ভাই-তিন বোনের মধ্যে তাঁর অবস্থান সবার শেষে। ভাইবোনদের কাছেই তার বেড়ে ওঠা। বড় ভাইবোন সর্বস্ববা। তাদের কথা ফেলানোর উপায় কার আছে! সে সময়ের একটা রেওয়াজ ছিল খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের পিড়িতে বসতে হত। রাজ্জাকের ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছিল। মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছে। বাধ্য হয়েই বলা চলে। কনে খায়রুন্নেসা (ডাকনাম লক্ষী)। সেটা ১৯৬২ সালে, কলকাতার টালিগঞ্জের ঘটনা। এরপর কেটে গেল দীর্ঘ ৫৫ বছর, ভালোবাসায় বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি। এ বছর ২ মার্চও তাঁরা ঘটা করে বিবাহবার্ষিকী পালন করেছেন।
বিয়ের সময় রাজ্জাক অখ্যাত এক যুবক। কলকাতার থিয়েটারে টুকটাক অভিনয় করেন। সংসার জীবনের শুরুতে লক্ষীকে বলেছিলেন , ‘আমার কিন্তু আরেকটা ‘স্ত্রী’ আছে। সেটা হলো অভিনয়! লক্ষীও তা মেনে নিয়েছিল। সেই যে হাত ধরেছিলেন। মৃত্যুর মত বিদায় সে হাত ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছে। অভিনয়ের কারণে এমন অনেক দিন কেটেছে, না খেয়ে দিন পার করেছেন। এ নিয়ে লক্ষী কখনোই একটি কথাও বলেনি। বরং উৎসাহ দিয়েছেন। সে। প্রতিটি দুঃসময়ে-সুঃসময়ে লক্ষী ছিলেন পাশে। দীর্ঘ এ দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসায় একটুও ভাটা পড়েনি। বরং দিন যত বেড়েছে ভালবাসা ততই গভীর হয়েছে। ভালোবাসার ফসল হয়ে রাজ-লক্ষ্মী দম্পতির ঘরে তিন পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান এসেছেন। তারা হচ্ছেন বাপ্পারাজ, বাপ্পি, সম্রাট, শম্পা ও ময়না।
দীর্ঘ এ পথচলায় অনেক মধুর ও কষ্টের স্মৃতি রয়েছে তাঁদের। তার মধ্যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজ্জাকের এক চাপা কষ্ট ছিল বড় মেয়ের মৃত্যু। যা তিনি কখনো ভুলতে পারেননি। ১৯৯৩ সালে ২৮ বছর বয়সে বড় মেয়ে শম্পা মারা গিয়েছিলেন। রাজ্জাক তখন ঢাকার বাইরে একটি ছবির শুটিংয়ে ব্যাস্ত। মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে ছুটে ঢাকায় চলে আসেন। বুকে জড়িয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বারবার সে স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়িয়েছে তাকে। বিশেষ করে, বাকি চার সন্তান [বাপ্পারাজ, বাপ্পী, সম্রাট ও ময়না] যখন একত্র হয় তখন খুব মিস করতেন। জীবনের এতোগুলো বছর লক্ষীর সঙ্গে কাটিয়েছেন। কত নায়িকার সঙ্গে জুটি হয়েছেন। নানা রকম কথাও রটেছে।
কিন্তু লক্ষীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল চিরসবুজ চির উজ্জল। তার প্রযোজনা সংস্থার নাম রাজলক্ষী প্রোডাকশন। আরো অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্ত্রীর নামে করেছেন। প্রতিটা সিনেমার সাইনিং মানি প্রথমে স্ত্রীর হাতে দিতেন। কারনও আছে বটে। কলকাতা থেকে স্বরনার্থী হয়ে বাংলাদেশে এসে কমলাপুরের এক ছোট বাসায় ছিলেন। প্রচন্ড কষ্টে তখন সংসার চলতো। সেখান থেকে গুলশান। কখনোই তার হাত ছাড়েননি। রাজলক্ষীর সঙ্গে সংসারের বয়স পঞ্চাশ তো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সম্পর্ক একটা জায়গায় এসে থমকে গেল। আর তার জন্য দায়ী কিংবদন্তীর মৃত্যু। মৃত্যুর পর রাজলক্ষী চুপ হয়ে গিয়েছেন। কারো সাথে কথা বলছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ২৩ আগস্ট ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস