কনে দেখা নাকি লাউ কেনা

জাজাফী
এক্স ক্যাডেট ফারহানা আপুকে দেখার জন্য ছেলেপক্ষ এলো বাড়িতে। ছেলের ভাই-বোন-ভাবি-দাদা এসেছিল, সাথে ছেলেও ছিল। ফারহানা আপুকে দেখে তাদের পছন্দ হলো। গতানুগতিকভাবে ওকে প্রশ্নও করা হলো তোমার নাম কী, কয় ভাইবোন, তুমি কত তম, পড়াশোনা কতটুকু করেছো, নামাজ পড়ো কিনা, কালেমা শাহাদাত বলো ইত্যাদি ইত্যাদি।

ফারহানা আপু বেশ সুন্দরভাবে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিল, এতে করে ছেলে পক্ষের সবাই ভীষণ খুশি। ছেলেও দু’একটা প্রশ্ন করেছিল। এবার ছেলের দাদা ফারহানা আপুকে বললেন, ফারহানা, তুমি কি কিছু বলবে আর? এই সুযোগটাই চাইছিল আপু। সে বললো, আপনারা দশজন মিলে তো আমাকে নানা প্রশ্ন করলেন, আমি সবগুলোর সঠিক জবাবও দিলাম।আমার খুব ইচ্ছা আপনাদের দশজনকে আমি একটা একটা করে প্রশ্ন করি।

ছেলেপক্ষের লোকেরা মোটামুটি আধুনিক ঘরানার, ফলে ফারহানা আপুর প্রস্তাবে তারা রাজি হয়ে গেল। ফারহানা আপু তখন ছেলের দাদুকে দিয়েই শুরু করলো। সে বললো, আচ্ছা দাদু বলুন তো, ক্রসকান্ট্রি_রেস কী জিনিস? দাদু মাথা চুলকাতে লাগলেন, বাকিরাও একই অবস্থা। দাদু তখন বললেন, ও ক্রসকান্ট্রি রেস? এটা তো খুবই সোজা। একটা দেশের সীমানার মধ্যে অন্য একটা দেশের সীমানা ঢুকে গেলে সেটা নিয়ে অফিসে ফাইল চালাচালির সময় যে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় সেটাই ক্রসকান্ট্রি রেস। সবাই তখন দাদুকে সাবাশি দিল। ফারহানা আপুর দিকে তাকিয়ে সম্মতি চাইলো আপু কিছু বললো না।

ছেলের বড় বোন ছিল, যে ফারহানা আপুকে প্রশ্ন করেছিল, বলো তো মালাইকারি বানানোর সময় কী কী করতে হয়। সেই বড়বোনকে ফারহানা আপু প্রশ্ন করলো, আচ্ছা আপু বলুন তো, #প্রেপের সময় কী কী করতে হয়? বড় বোন দাদুটার মতো মাথা না চুলকে পণ্ডিতি করে বললো প্রেপের সময় প্রার্থনা করতে হয়, দোয়া করতে হয়, সে জন্যই তো এর নাম প্রেপ। ফারহানা কিছু বললো না।

ছেলের আরেক বড় ভাই ছিল, আপু তাকে প্রশ্ন করলো, আপনি বলুন তো নভিসেস_ড্রিল কী? সে উত্তর দিল, মাটির দেওয়ালে ফুটো করতে যে ড্রিল ব্যবহার করা হয় সেটা নভিসেস ড্রিল।

ছেলের ছোট ভাই ফারহানা আপুকে প্রশ্ন করেছিল বিপি কি? বিপি মানে যে ব্লাড প্রেসার এটাতো সবাই জানে, ফারহানা আপুর তো না জানার কথা নয়। সেই ছোট ভাইকে আপু প্রশ্ন করলো, বলুন তো, সিপি কি? ছোট ভাই ঝটপট উত্তর দিল, সিপি হলো একটা ফাস্টফুডের দোকান। যেখানে ফ্রাইড চিকেন, চিকেন উইংস, চিকেন বল, চিকেন নাগেট, চিকেন সসেজ বিক্রি হয়।

সবার শেষে ছেলের পালা। ছেলে ফারহানা আপুকে প্রশ্ন করেছিল, উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি কী দিতে বেশি ভালবাসেন? তখন ফারহানা আপু অন্য একটা উত্তর দিয়েছিল। এবার ছেলেকে আপু প্রশ্ন করলো, আপনি কখনো ইডি খেয়েছেন? ছেলে বললো, না খাইনি। তখন ফারহানা আপু বললো, আমি অন্যদেরকে যে উপহারই দেই না কেন, যদি আপনাদের সবাইকে উপহার দিতে বলতেন তাহলে সবাইকে ইডি খাওয়াতাম উপহার হিসেবে। মেহমানরা সবাই মুখ চাওয়া চাউয়ি করতে লাগলেন, কারণ তারা তো জানেই না ইডি আসলে কোন ধরনের খাবার জিনিষ।

ফারহানা আপু প্রশ্ন শেষ করে বললো, প্রশ্ন করা খুবই সহজ, কিন্তু উত্তর দেওয়া অনেক কঠিন। আপনারা দশজন আমাকে দশটা প্রশ্ন করেছেন, আমি সবগুলোর সঠিক জবাব দিয়েছি। যদি দিতে না পারতাম তাহলে বলতেন, মেয়ে তো অযোগ্য, অপদার্থ, কিছুই জানে না। পক্ষান্তরে আপনাদের প্রত্যেককে আমি একটা করে প্রশ্ন করেছি, কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। কিন্তু আমাদের কারো পক্ষেই আপনাদেরকে অযোগ্য বলার সুযোগ নেই।

আপনারা আমাকে দেখে পছন্দ করেছেন,ছেলের যোগ্য মনে করেছেন, এখন ভেবে দেখুন তো আপনাদের ছেলে আমার যোগ্য কিনা। দেখুন! মাফ করবেন, আমি আপনাদের আঘাত দিতে চাইনি। মেয়েদেরকে গরু-ছাগলের মত বাজারে উঠিয়ে দাঁত ধরে দেখে খুঁত আছে কিনা পরখ করে, তারপর বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর নীতি বন্ধ হওয়া উচিত। মেয়েরা কোন পণ্য নয় যে, লাউ কেনার সময় যেমন চিমটি কেটে লাউ কেনে সেভাবে হাঁটিয়ে, বসিয়ে, প্রশ্ন করে তার পর বউ বাছাই করবেন।

ফারহানা আপুর কথা শুনে সবার মুখ কালো হয়ে গেল। আমাদের পরিবারের সবাইও বেশ লজ্জায় পড়ে গেল। মেহমানদের খাওয়া-দাওয়া ভাগ্যিস আগেই হয়ে গিয়েছিল, নইলে তারা না খেয়েই বিদায় নিত। সেই ছেলে পক্ষ পরে একদিন চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়েছিল।

তিন বছর পর ফারহানা আপুর সাথে সেই ছেলেটির দেখা হয়েছিল এক পার্টিতে। ততোদিনে আপুর বিয়ে হয়ে গেছে আপুর পছন্দের ছেলের সাথে। যার সাথে দুবছর আগে রিলেশান হয়েছিল। কথায় কথায় সেই ছেলেটি বলেছিল আর যাই হোক ঘরে একজন এক্স ক্যাডেট স্ত্রী থাকলে স্বামীর অবস্থা কাহিল। তারপর ফারহানা আপুর হাজবেন্ডকে বললো, ভাই আপনি কিভাবে কোন মন্ত্রবলে টিকে আছেন শুনি।

ফারহানা আপুর হাজবেন্ড তখন হেসে দিয়ে বললো, ভাই আপনারা যেটা খাওয়ার সাহস পাননি, আমি সেটা ক্লাস সেভেন থেকে খাওয়ার অভ্যাস করেছি, ফলে ইডি আমার সহজেই হজম হয়ে যায়। সিপিতে গিয়ে চিকেন বল চিকেন সসেজ খাওয়ার দরকার পড়ে না, কারণ কলেজে নিজেই তো সিপি ছিলাম। আমাদের মাটির দেওয়াল নেই তাই নভিসেস ড্রিল নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিনা। আর ক্রসকান্ট্রি রেস? সেটাও সমানে চলছে।

ছেলেটা শুধু বোকার মতো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। বুঝে হাসলো এটা আপনি বলতে পারবেন না,সে কোন কিছু না বুঝেই হেসেছে, আর সেটা দেখে ফারহানা আপু আর তার হাজবেন্ডও হেসেছে।

—– জাজাফী

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম

Scroll to Top