বড় পর্দার তারকারা সবসময় আমাদের বিনোদন দেয়ার মতো বড় দায়িত্বটা বরাবরই দিয়ে আসছে। আমাদের হাসান, আবার কখনো কাঁদান। সেরাটা দিতে নিজেদের উজাড় করে দেন।
অথচ আপনার-আমার মতো পর্দার এ মানুষগুলোর ব্যক্তিজীবনে নানা রকমের সমস্যায় কাতর। তারকারা কত যন্ত্রণায় ভুগে দিন যাপন করেন, সে খবর হয়তো পর্দার সামনে দর্শক আঁচ করতে পারবেন না। বলিউডের শীর্ষ তারকাদের এমন অনেকে আছেন, যাঁরা দিনের পর দিন নানান শারীরিক সমস্যায় দিন যাপন করছেন। কেউ কর্কট রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন, কেউ মারাত্মক বিষণ্নতায় ভুগছেন, কারও যকৃতের (লিভার) বেশির ভাগ অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আবার এমনও আছেন, যন্ত্রণায় আত্মহত্যাও করতে গিয়েছিলেন কেউ কেউ। আজ জানি এমন সাত তারকার কথা:
যকৃতের ৭৫ শতাংশ অংশই অকার্যকর অমিতাভ বচ্চনের
৭০ পেরিয়েও ‘শাহেনশাহ’ বলিউড শাসন করছেন। পর্দায় এখনো যিনি নিজের মুদ্রায় নেচে মুগ্ধ করেন, একটার পর একটা সিনেমায় অভিনয় করছেন, পণ্যের বিজ্ঞাপন করে যাচ্ছেন, সেই কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন বেঁচে আছেন মাত্র ২৫ শতাংশ সক্রিয় যকৃৎ নিয়ে! বর্ষীয়ান এই অভিনেতার যকৃতের ৭৫ শতাংশ অংশই অকার্যকর হয়ে গেছে—হেপাটাইটিস বি-র মতো মারাত্মক ভাইরাসের আক্রমণে।
গেল বছর অমিতাভ বচ্চন নিজেই জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন তিনি ২৫ শতাংশ যকৃৎ নিয়েই বেঁচে আছেন। এই রোগ তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছিল ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে। ‘কুলি’ ছবির শুটিংয়ের সেটে তাঁর মারাত্মক একটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তলপেটে মারাত্মক আঘাত পেয়ে প্লীহা ফুটো হয়ে যায় তাঁর। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাণের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সময় তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অনেক রক্তদাতার কাছ থেকে রক্ত নিতে হয়েছিল তাঁকে। সেই সময়ে একজন দাতার রক্তে হেপাটাইটিস বি-র সংক্রমণ ছিল। তাঁর রক্ত নেওয়ার পরই এই ভাইরাসের (রোগের) জীবাণু তাঁর শরীরে ঢুকে যায়, যদিও ওই সময়ে কিছুই বুঝতে পারেনি কেউ। পরে ২০০০ সালে অমিতাভকে চিকিৎসকেরা জানালে, তিনি প্রথমবারের মতো বুঝতে পারেন যে তাঁর যকৃতের অবস্থা খুব সুবিধার নয়। তাঁর শরীরের যকৃতের ৭৫ শতাংশই নষ্ট হয়ে গেছে।
ক্যানসার জয় করেছেন মনীষা কৈরালা
২০১২ সালের কথা। ‘এক লাড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা’, ‘বাহো কি দারমিয়া’ অথবা ‘ও ইয়ারা দিল লাগানা’ গানের মিষ্টি হাসির মেয়ে মনীষা কৈরালার ক্যারিয়ার তখন তুঙ্গে। হঠাৎ করেই তাঁর জীবনে ঝড় নামল। ক্যানসার ধরা পড়ে অভিনেত্রী মনীষার। দীর্ঘদিন কেমো থেরাপিরসহ জটিল চিকিৎসা পদ্ধতির পর অস্ত্রোপচারের হয়। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। মাঝে অনেক কঠিন সময় গেছে তাঁর। এখন কিছুটা সেরে উঠতেই কাজে লেগে পড়েছেন তিনি। কিন্তু হিন্দি ছবিতে দর্শক তাঁকে এখনো আগের মতো করে পাচ্ছেন না।
সালমান খান আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন
অবিশ্বাস্য মনে হবে। আহা, বেচারা সালমানের এমনও দিন গেছে! হাসিখুশির মানুষটা। বলিউড হার্টথ্রুব সালমান একটা সময় এমনই যন্ত্রণায় ভুগছিলেন যে রীতিমতো আত্মহত্যার প্রবণতাও তৈরি হয়েছিল তাঁর মধ্যে। সে যন্ত্রণা সহ্য করা কঠিন।
যে রোগে সালমান ভুগছিলেন, সে রোগের নাম ট্রাইজেমিনাল নিউরোলজিয়া। এক কথায় ফেসিয়াল নার্ভ ডিসঅর্ডার। সালমান বলেছেন, যন্ত্রণায় পাগল হয়ে একটা সময়ে তাঁর আত্মহত্যার ইচ্ছে হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নিজেকে হারতে দেননি। যন্ত্রণা থেকে দূরে থাকতে, ভুলে থাকতে পরিশ্রম আরও বাড়িয়ে দেন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি বলেও এক সাক্ষাৎকারে জানান সালমান।
ছুরির নিচে বারবার শাহরুখ খান
শল্যচিকিৎসকের ছুরির নিচে বারবার নিজেকে সঁপে দিতে হয়েছে বলিউড বাদশা শাহরুখ খানকে। নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহুবার আহত হয়েছেন শাহরুখ। প্রতিবার ফিরে এসেছেন শাহরুখ, তবে বিরতিতে যেতে হয়েছে তাঁকে। তারপরও শরীর নিয়ে মোটেও শান্তিতে নেই শাহরুখ। হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন দীর্ঘদিন। সেখানেও একবার সার্জারিও হয়ে। যে কারণে নি-ক্যাপ পরেই শুটিং করছিলেন। কয়েক মাস আগে ইমতিয়াজ আলীর ‘দ্য রিং’ ছবির শুটিং করার সময়েই ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন কিং খান। তবে সেবারও কাজ বন্ধ করেননি তিনি। ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়ে এবং ইনজেকশন দিয়েই ব্যথা আয়ত্তে রাখেন শাহরুখ।
খুব শিগগির আবারও হাঁটুর অস্ত্রোপচারও করতে হবে, জানিয়েছেন ডাক্তার। ছবির কাজ গুছিয়ে নিয়ে শুটিং থেকে ছুটি নিয়ে বিশ্রামে যাবেন তিনি৷
দীপিকা পাড়ুকোনের মারাত্মক মানসিক রোগ
বলিউড ছাড়িয়ে হলিউডেও দীপিকা পাড়ুকোন জনপ্রিয়। তিনি এখন বলিউডের এক নম্বর নায়িকা। সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক আদায় করেন। যে ছবি করছেন, সেটাই বক্স অফিসে সুপারহিট। সেই দীপিকাকে বাইরে থেকে যতই শক্তপোক্ত লাগুক না কেন, তিনি একসময় যে মানসিক রোগে ভুগছিলেন, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। শুধু তা-ই নয়, নিজের অতীতের এসব কথা বলতে গিয়ে একেবারে কেঁদে ফেলেছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন।
গেল বছর অক্টোবরের কথা। মুম্বাইয়ে এক অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানটি ছিল মানসিক অবসাদ বিষয়ে। সেখানে কথা বলতে গিয়ে দীপিকা বলে ওঠেন, ‘কয়েক বছর আগে আমার সঙ্গে দেখা করতে আমার বাড়ির লোকজন এসেছিল। তারা চলে যাওয়ার সময় আমি একা আমার ঘরে বসে ছিলাম। আমাকে মা বারবার জিজ্ঞেস করেছিল, কিছু হয়েছে? আমি মাকে বলতে পারিনি। মায়ের বারবার প্রশ্ন করায় শেষমেশ নিজেকে আটকাতে পারিনি। কেঁদে ফেলেছিলাম। জানিয়ে ছিলাম আমার মানসিক সমস্যার কথা!’
হৃতিকের মাথায় নিদারুণ যন্ত্রণা
ছবিতে স্টান্টম্যান ব্যবহার করা মোটেই পছন্দ করেন না তিনি। চরিত্রের খাতিরে লাফঝাঁপগুলো নিজেই সারেন। আর তার জেরেই ২০১৩ সালে মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে হৃতিক রোশনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার আগে কয়েক মাস ধরে মাঝেমধ্যেই মাথার যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তিনি। মাথাব্যথাকে প্রথমে গুরুত্ব দেননি ‘কৃষ’ তারকা। পরে ডাক্তার দেখাতেই সিটিস্ক্যান করতে বলা হয়। এতেই ধরা পড়ে খুলিতে জমাট বেঁধেছে রক্ত, মাথায় একাধিক আঘাত।
লিসা রে ২০০৯ সালে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত
বাঙালি বংশোদ্ভূত কানাডীয় অভিনেত্রী লিসা রে। মডেল থেকে অভিনেত্রী হয়েছিলেন। নুসরাত ফতেহ আলী খানের ‘আফ্রি আফ্রি’ গানটি জনপ্রিয় করে তাঁকে। বেশ চলছিল দিন। কিন্তু ২০০৯ সালের জুন মাসে ‘মাল্টিপল মাইলেমো’ নামের একধরনের ব্ল্যাড ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। এরপর দুরারোগ্য ব্যাধির সঙ্গে দুই বছরের কঠিন সংগ্রামে চালিয়ে যান তিনি। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা আর নিজের জীবনীশক্তির জোরেই ঘাতক ব্যাধিকে লিসা রে পরাজিত করেন। অবশেষে লিসা রে একজন ‘ক্যানসার সারভাইভার’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। বর্তমানে ভারতের কেরল রাজ্যের ‘মোক্ষ’ যোগব্যায়াম শেখার কাজ করছেন। তিনি এখন যোগব্যায়ামের ওপরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, ২২ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ