সেই ‘জজ মিয়া’ এখন ট্যাক্সিচালক

কষ্টের শেষ নেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বহুল আলোচিত চরিত্র জজ মিয়ার। নৃশংস ওই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত না হয়েও ২০০৪ সালে রাজধানীর মতিঝিলের এই ফল ব্যবসায়ীকে সহ্য করতে হয়েছে অমানুষিক পুলিশি নির্যাতন।
হারিয়েছেন নিজের ভিটেমাটি। চাঞ্চল্যকর ওই মামলায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গোপন রেখে বিয়েও করেছিলেন জজ। তবে বিয়ের তিন মাসের মাথায় তা প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে গেছে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এদিকে মায়ের দুটি কিডনিই বিকল হয়ে যাওয়ায় তার চিকিৎসা খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বর্তমানে পেশায় গাড়িচালক এই মানুষটির।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মৌচাক এলাকার একটি টিনসেড বাড়িতে দুই রুম নিয়ে বৃদ্ধা মা, ছোট বোন ও ছোট ভাইকে নিয়ে জালাল উদ্দীন ড্রাইভার ওরফে জজ মিয়া বসবাস করছেন। যদিও মাস ৩ আগে তিনি বসবাস করতেন রাজধানীর কদমতলী থানার রায়েরবাগ এলাকায়।

কিন্তু সেই এলাকার মানুষ তাকে ‘জজ মিয়া’ হিসাবে চিনে ফেলায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো। ফলে তিনি বাসা পরিবর্তন করে বর্তমান ঠিকানায় চলে এসেছেন।

গতকাল সোমবার বিকালে আলাপকালে জজ মিয়া ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমি জজ মিয়া নই’। আমি জালাল উদ্দীন। ভোটার আইডি কার্ড দেখিয়ে বলেন, দেখুন আমার ভোটার আইডি কার্ডে জালাল উদ্দীন নাম।তিনি বলেন, ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তত্কালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের শীর্ষ পর্যায় থেকে ঘাতকদের রক্ষা করতে আমাকে ‘জজ মিয়া’ বানানো হয়।

তিনি বলেন, আমি বর্তমানে কিস্তিতে একটি পুরনো প্রাইভেটকার কিনে নিজেই ড্রাইভিং করে সংসার চালাই। নামের কারণে আমি সবার কাছে হাসি-তামাশার পাত্র। তাই আমার কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতেও চায় না। বছর দুই আগে চাঁদপুরে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পরে আমার স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন যখন জানতে পারেন আমিই সেই ‘জজ মিয়া’ তখন আমার স্ত্রীও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তিনি আরো বলেন, সত্যি কোনো দিনই চাপা থাকে না। যারা আমাকে আসামি করেছিল তারাই এখন সত্যিকারের আসামি হয়েছে। আল্লাহ্ তাদের বিচার করছে।

তিনি বলেন, ২০০৫ সালের ৯ জুন গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগের একটি চায়ের দোকান থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় সেনবাগ থানায়। সেখানে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভিডিও চিত্র দেখিয়ে বলেন, তুই এই ভিডিও ভালোভাবে দেখ। আমরা যাদের নাম বলবো সেই সবের নাম মুখস্থ করে আদালতে বলবি তাদের নির্দেশে তুই এই হামলা চালিয়েছিস। যদি না বলিস তা হলে তোকে ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়া হবে। তোর পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলা হবে। আর বললে তোর পরিবারকে মাসোহারা দেওয়া হবে, তোর ভাই-বোনদের চাকরি দেওয়া হবে, জেল থেকে বের করে তোকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে আমাকে একটানা ৪ বছর ২৬ দিন হাতে-পায়ে বেড়ি পরা অবস্থায় কনডেম সেলের অন্ধকার কুঠুরিতে থাকতে হয়েছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, ২২ আগস্ট ২০১৭,

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস

Scroll to Top