মোছা. গুলশান আরা। একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিংয়ের শিক্ষার্থী। প্রতারণা, বিয়ে ও ডিভোর্সের মাধ্যমে মোহরানা, খোরপোষের টাকা হাতিয়ে নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি। স্বামীসহ ননদ ও প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধ ব্যবসাসহ মানবপাচারের অভিযোগে মিথ্যা মামলা করে রংপুরে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। আদালতে দায়ের করা এ মামলা গতকাল পুলিশি তদন্তের জন্য রংপুর কোতোয়ালি থানায় পাঠানো হয়েছে।
অবশ্য এ নিয়ে রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। বিয়ের নিকাহনামা ও তালাক এর এফিডেভিট সূত্রে জানা যায়, রংপুর কেরানী হাটের রাধাকৃষ্ণপুর চৌধুরীপাড়ার আফসারুল ইসলামের কন্যা গুলশান আরার সঙ্গে রামপুরা এলাকার মৃত-ফয়েজ উদ্দিনের পুত্র মো. সুমন মিয়ার পারিবারিকভাবে ৪ লাখ ১ হাজার ১ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় চলতি বছরের ৬ই আগস্ট। বিয়ের দিন থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অবিশ্বাস ও শারীরিক অক্ষমতার অভিযোগে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।
এমতাবস্থায় উভয়ের মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় আপস-মীমাংসার বৈঠকে দেন মোহরানা ও ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় পাওনা দিয়ে তালাকের সিদ্ধান্ত হয়। সেই মোতাবেক গত ৮ই আগস্ট নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. আনোয়ারুল ইসলাম মণ্ডল (লিটন) এফিডেভিটের মাধ্যমে মেয়েকে পাওনা টাকা বুঝিয়ে দিয়ে তার সই-স্বাক্ষর নিয়ে আইন মোতাবেক বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান। গুলশান আরা বেগম টাকা গ্রহণের স্বীকৃতিপত্রে স্বাক্ষর করে অলঙ্কার বাবদ ১১ হাজার টাকা পরিশোধ বাদ দিয়ে বাকি টাকা বুঝে নেন।
এ ঘটনার পরপরই শুরু হয় আর এক নাটকীয় ঘটনা। গত ৩০শে আগস্ট গুলশান আরা জেলা রংপুর বিজ্ঞ মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে সুমন মিয়া, সিরাজুল, নাইমুল ইসলাম রনি, লিজা, শাহনাজ বেগম ওরফে লাভলী, জামান মিয়া, নুর আলমসহ ৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
মামলার আর্জিতে বলা হয়, গুলশান আরা নার্সিং শিক্ষার্থী এবং বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবীর ভাগ্নি। গত ৬ই আগস্টে তাদের বিয়ে হয় এবং বিয়ের দু’দিন পর ৮ই আগস্ট বাদিনীর মামা হাসিনুজ্জামান ওরফে লিপু ভাগ্নি জামাই অর্থাৎ ১নং আসামি সুমন মিয়ার কাপড় কেনার জন্য ডিসির মোড়ে এলে ১, ২ ও ৫নং আসামি প্রাইভেটকারে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাধাবল্লভ রোডস্থ একটি ঘরে আটকে রেখে একজন সুন্দরী যুবতীকে দিয়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন এবং রনির পকেট থেকে ৭৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মোবাইল ফোনে বাদিনী গুলশানকে ডিসির মোড়ে আসতে বলেন।
মামার মোবাইল ফোন পেয়ে বাদিনী ডিসির মোড়ে এলে তাকে ৫নং আসামি শাহনাজ লাভলীর এ্যানজেলা বিউটি পার্লারের বিশেষ রুমে নিয়ে গিয়ে অপরিচিত একজন যুবককে প্রবেশ করিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় বাদিনী চিৎকার করে বেরিয়ে এলে তাকে শাহনাজ লাভলী রাধাবল্লভস্থ স্টাফ কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তালাক নামা ও ১শ’ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে এবং হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনায় বাদিনী কিছুদিন পর আদালতে তাদের বিরুদ্ধে বিউটি পার্লারের অন্তরালে অবৈধ ব্যবসাসহ মানবপাচার ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ তুলে মামলা করেন। এ ব্যাপারে ধাপ এলাকার সমাজকর্মী রোটারিয়ান আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, এ্যানজেলা বিউটি পার্লার প্রায় দেড় যুগ ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
প্রতিষ্ঠানটি ডিসি’র বাংলো, এসপি’র বাংলো ও সার্কিট হাউজের সামনে প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত। এখানে কোন অবৈধ কর্মকাণ্ড হলে এখানকার মানুষজনসহ প্রশাসন সোচ্চার হতো। কিন্তু কোনো দিন কোনো অভিযোগ উঠেনি। এ্যানজেলা বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী শাহনাজ লাভলী বলেন, গুলশান আরা নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে করেন। বিয়ের পরদিনই তারা জানতে পারেন গুলশান আরা এর আগেও বিয়ে করেছিলেন এবং তার চরিত্র ভালো না। এ বিষয়ে তারা গুলশান আরাসহ তার পরিবারের কাছে জানতে চাইলে তারা পূর্বের বিয়ের সত্যতা স্বীকার করেন। বর সুমন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে তারা আপসের মাধ্যমে কনেকে দেনমোহরের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষরে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটান। এটা স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার।
কিন্তু ওই মহিলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার জন্য এবং আমার কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য ফন্দিফিকির করে অবৈধ ব্যবসা ও মানবপাচারের অভিযোগ এনে মিথ্যা মামলা করেন। তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানসহ আমার বিরুদ্ধে প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে তদন্ত করা হোক। আমি দোষী হলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবো। আর যারা আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে উঠে-পড়ে লেগেছে তাদের মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিচার ও শাস্তির দাবি করছি। সূত্র-মানবজমিন
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি