হ্যালো, আমি কাস্টমস অফিসার অনিক মাহমুদ আকাশ বলছি। আমার পাঁচটি আইফোন লাগবে। ঈদের আগে মন্ত্রী, একটি সংস্থার চেয়ারম্যানসহ পাঁচ ভিআইপিকে আইফোন উপহার দেব। দোকানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিন, আমি টাকা দিয়ে দিচ্ছি।
এভাবেই ‘স্যাটকম আই সেন্টার’-এর ম্যানেজার রানাকে কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে ফোন করে প্রতারক আকাশ। কথোপকথন শেষে রানা তাকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিলে কয়েক ঘণ্টা পর টাকা জমা দেয়া হয়েছে বলে জাল ব্যাংক সিল এবং রিসিভের কপি ভাইবারে পাঠিয়ে দেয়।
ভাইবারে পেমেন্ট পেয়ে আইফোন পাঠিয়ে দেয় রানা। নির্দিষ্ট সময়ের পরও যখন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে না, তখন খোঁজখবর নিয়ে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণা শিকার হয়েছেন।
শুধু রানা নয়, এভাবে ফোন দিয়ে কয়েক বছরে শতাধিক আইফোন হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
সম্প্রতি উত্তরা থেকে প্রতারক চক্রের সদস্য অনিক মাহমুদ আকাশকে পাঁচটি আইফোনসহ গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিম। তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সুন্দরী কন্যা মাহমুদা ইসলাম মৌর ভয়াবহ প্রতারণার ফাঁদ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।
মৌর কথিত প্রেমিক আকাশ গ্রেফতারের পর আত্মগোপন করেছেন এ নারী। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মৌর রয়েছে একাধিক প্রেমিক।
আগে বিয়ে হলেও স্বামীকে নিজেই তালাক দেয় এ নারী। এরপর একাধিক প্রেমিক নিয়ে গড়ে তুলে প্রতারক চক্র। আকাশও তার কথিত প্রেমিক ও প্রতারক চক্রের একজন সদস্য। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেয়া নামিদামি ব্যান্ডের আইফোন বিক্রি করত চক্রের হোতা মৌ।
কর্মকর্তারা বলেন, এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে গত কয়েক বছরে কোটি টাকার সম্পদ করেছে মৌ। মিরপুর ১০ পল্লবীর কালশীর ২৬ নম্বর প্যারিস রোডে রয়েছে একটি নিজস্ব ফ্ল্যাট, রয়েছে দামি গাড়ি। আর এসবই করেছে সে প্রতারণার অর্থ দিয়ে।
গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে কথিত প্রেমিক আকাশ গোয়েন্দাদের বলেছেন, তিনি নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বিমানবন্দরে সিএনএফ এজেন্টে কাজ করেন। সেখান থেকে মোবাইল ফোন ও দামি ব্যান্ডের জিনিসপত্র চুরি করে প্রেমিকা মৌর হাতে তুলে দিত। আর মৌ সেগুলো অনলাইনে বিক্রি করত।
তাছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আয় করে মাসের শুরুতে প্রেমের শর্তের ৫০ হাজার টাকা তুলে দিত আকাশ। আর এ টাকা দিয়ে পুরো পরিবার চালাত তার প্রেমিকা।
এছাড়াও প্রেমিকার জন্য বিভিন্ন সময় মোট ৩৫ লাখ টাকা খরচ করেছে। তিনটি আইফোন, প্রাইভেট কার ক্রয়ের জন্য চট্টগ্রামের মোটর পার্টস ব্যবসায়ী সুমনকে ১৭ লাখ টাকা পাঠানো, চায়নায় মোবাইল এক্সেসরিস সাপ্লাইয়ার এমিকে ৬ লাখ টাকা, দুবাইয়ে ক্যামেরার লেন্স ও ফ্ল্যাস লাইট সাপ্লাইয়ার মাইকেলকে ৪ লাখ টাকা পাঠানোর কথা স্বীকার করেছে আকাশ।
আকাশ গোয়েন্দাদের আরও বলেছে, বড় কোনো প্রতারণার টার্গেট সফল হলে আকাশ মৌকে নিয়ে পাঁচতারা হোটেলে পার্টি দিত এবং এক সঙ্গে রাতযাপন করত।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন, বিভিন্ন পরিচয়ে দোকানে ফোন দিয়ে আইফোন অর্ডার করত এ প্রতারক চক্রের সদস্যরা। আকাশকে গ্রেফতারের পর তাদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া গেছে।
চক্রের হোতা মৌ তার কথিত প্রেমিকদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। এডিসি জুয়েল আরও বলেন, আকাশকে জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের একাধিক সদস্যের নাম পাওয়া গেছে, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
স্যাটকম আই সেন্টারের ম্যানেজার রানা বলেন, ঈদের আগে কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে ফোন দিয়ে পাঁচটি আইফোন অর্ডার করে আকাশ। ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর চেয়ে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট করে। এই চক্রের সদস্যরা এভাবে আরও একাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দামি মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়েছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করি। অনুসন্ধানে প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাই।’ আকাশ ভুয়া সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, ব্র্যাক ও মধুমতি ব্যাংকের ক্যাশ রিসিভ এবং সিল জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন শোরুম থেকে আইফোন হাতিয়ে নিত।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে