অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের পর এবার বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এ মাসের শেষ সপ্তাহেই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। ২৮ সেপ্টেম্বর পচেফস্ট্রমের সিউজ পার্কে প্রথম টেস্টে ডু প্লেসিস বাহিনীর মুখোমুখি হবে মুশফিকুর রহীমের দল। সে লক্ষ্যে আগামী ১৮ সেপেটম্বর দেশ ছাড়বে টাইগাররা।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে সিরিজের প্রস্তুতি। সে লক্ষ্যে আগামীকাল দল ঘোষণা। জানা গেছে স্কোয়াড হবে ১৫ জনের। দেশের মাটিতে অজিদের সাথে খেলার পর দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট এবং বাউন্সি উইকেটে প্রোটিয়াদের সাথে খেলা, দলে পরিবর্তন আসাই স্বাভাবিক।
দেশে তিন স্পিনার ছিলেন স্কোয়াডে, দক্ষিণ আফ্রিকান কন্ডিশনে কি তারা থাকবেন? না ফাস্ট ও বাউন্সি ট্র্যাকে পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টকে সমৃদ্ধ করে সাজানো হবে দল? ব্যাটসম্যান থাকবেন কত জন? এখন ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টে ৬০ ভাগ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। প্রথম পাঁচজনই বাঁ-হাতি। সেই জায়গায় কী পরিবর্তন আসবে?
ইতিমেধ্যেই ক্রিকেট পাড়ায় এসব কৌতুহলি প্রশ্ন উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে। বোর্ড সভাপতি প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খানসহ বোর্ডের নীতি নির্ধারক মহলের আর ক’জন শীর্ষ পরিচালককে নিয়ে গুলশানে নিজ বাসায় দল গঠন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন।
ইতিমধ্যে ক্রীড়া লেখক সমিতির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের সাথে আলাপে বিসিবি প্রধান এক পর্যায়ে বলে বসেন, তিনি অধিনায়ক মুশফিককে তার পছন্দের দল সাজাতে বলেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট ও বাউন্সি ট্র্যাকের কথা মাথায় রেখে স্পিন শক্তি কমিয়ে পেস ডিপার্টমেন্টকে সমৃদ্ধ করার কথা ভাবা হয়েছে। তাই ১৫ জনের টেস্ট দলে পাঁচ পেসারের অন্তর্ভূক্তি মোটামুটি নিশ্চিত। তার মানে অস্ট্রেলিয়ার সাথে হোম সিরিজে দলে থাকা তিন পেসার মোস্তাফিজ, শফিউল ও তাসকিনের সাথে আরও দু’জন পেসারকে দলে নেয়া হবে। রুবেল হোসেন ও কামরুল ইসলাম রাব্বির নাম শোনা যাচ্ছে এ ক্ষেত্রে।
এর বাইরে আর একটি জায়গা নিয়েই কথা হয়েছে বেশি, তা হলো টপ অর্ডার ব্যাটিং। সেখানে সৌম্য সরকার আর ইমরুল কায়েসের সাম্প্রতিক ফর্ম ভালো না। এক কথায় অস্ট্রেলিয়ার সাথে হোম সিরিজে দু’জনই ব্যর্থ। শুধু ওপেনার সৌম্য সরকার আর তিন নম্বর ইমরুল কায়েসের ফর্ম খারাপই চিন্তার কারণ নয়। চার নম্বর পজিশন নিয়েও আছে সংশয়। মুমিনুল নিয়মিত খেললে এই পজিশন নিয়ে সমস্যা ছিল না; কিন্তু মুমিনুলকে নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা শুরুর পর চার নম্বর পজিশনও আনসেটল্ড।
এর বাইরে টপ ও মিডল অর্ডারে খুব বেশি বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান, লাইনআপে প্রথম পাঁচজন বাঁ-হাতি, সেখানে অন্তত একজন ডানহাতি রাখা যায় কি না? তা নিয়েও কথা হয়েছে বিস্তর। সব মিলিয়ে ব্যাটিং ডিাপর্টমেন্টের ওই জায়গার গঠন বিন্যাস নিয়েও আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে।
এর মধ্যে তামিম ইকবাল, অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসান অটোমেটিক চয়েজ। মুশফিকের সাথে একজন রিজার্ভ উইকেটকিপার থাকবেন এটাও শতভাগ নিশ্চিত। খালি চোখে লিটন দাসের সম্ভাবনাই বেশি। তবে স্পেশালিস্ট কিপার নুরুল হাসান সোহানের দলভুক্তির সম্ভাবনাও আছে।
এর বাইরে সৌম্য সরকার আর মুমিনুল হককে নিয়েও সংশয় নেই। যদিও কেউ কেউ সৌম্যর শেষ সিরিজে রান না পাওয়া নিয়ে অসন্তুষ্ট; কিন্তু একদম ভিতরের খবর, সৌম্যর দলে থাকা নিয়েও কোন সংশয় নেই।
তুলনামূলক ফাস্ট ও বাউন্সি পিচে সৌম্যর ব্যাট সচল, তার ট্র্যাক রেকর্ডও ভাল। তাই সৌম্যকে দলে রাখতে কোচ, অধিনায়ক ও নির্বাচক- সবাই প্রায় একমত। মোট কথা, বিসিবি প্রধানের সাথে দল নিয়ে যাদের কথা হয়েছে, তারা কেউ সৌম্যকে দলে রাখার বিষয়ে কোন নেতিবাচক কথাই বলেননি।
কেন বলবেন? অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টে রান না পেলেও ‘ওপেনার’ সৌম্যর পরিসংখ্যান খুব ভাল। ৯ টেস্টে ১৭ ইনিংসে সৌম্যর রান ৫৪৬। গড় ৩২.১১। সর্বোচ্চ ৮৬। অর্ধশতক ৪টি। আর ওপেনার হিসেবে ছয় টেস্টের ১২ ইনিংসে তার সংগ্রহ ৪৩৯ রান। সর্বোচ্চ ৮৬। গড় ৩৬.৫৮, হাফ সেঞ্চুরি ৪টি। সেখানে ছয় নম্বরে এক টেস্টে তার রান ৩৭, আর সাত নম্বরে ২ টেস্টে করেছিলেন ৭০। সে তুলনায় স্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান কম। চার ইনিংসে করেছেন মোটে (৮+১৫+৩৩+৯) = ৬৫।
ওদিকে ইমরুল কায়েসকে নিয়ে বিস্তর কথা হলেও জানা গেছে এই বাঁ-হাতিও দলে থেকে যাচ্ছেন। জানা গেছে, নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিকুল পরিবেশে অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করতে চাচ্ছেন বেশি। তাই ইমরুলকে বাদ দেয়া চিন্তা করছেন না।
তিন নম্বরে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও ওপেনার ইমরুলের রেকর্ড বেশ ভাল- ২৫ টেস্ট ৪৮ ইনিংস রান ১২৫৮। গড় ২৭.৩৪। তিন শতরানের দুটিই ওপেন করতে নেমে। সব ক’টা হাফ সেঞ্চুরিও ওপেনার হিসেবেই। সে তুলনায় তিন নম্বর পজিশনের রেকর্ড খারাপ; ৫ টেস্টে ৯ ইনিংসে ২২৭ রান। গড় ২৫.২২। শতরান একটি। হাফ সেঞ্চুরি নেই।
এক থেকে পাঁচ নম্বর- পাঁচজন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে একজন ডান হাতির অন্তর্ভূক্তির কথা ভাবা হচ্ছে। সেই চিন্তায় এনামুল হক বিজয়ের কথা বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, নির্বাচকরা এবং হেড কোচ এনামুল হক বিজয়ের বিষয় মোটেই উৎসাহি নন। তাই এনামুল হক বিজয়ের দলে ফেরার সম্ভাবনা খুব কম।
আর ওপরের দিকে ডান হাতি ব্যাটসম্যানের অন্তর্ভুক্তি দক্ষিন আফ্রিকা সফরে তেমন প্রভাব ফেলবে না। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকায়তো আর অফ স্পিনার নাথান লিওন নেই। সেখানে সামলাতে হবে এক ঝাঁক ফাস্ট বোলারকে।
মাঝে টেস্ট পারফরমেন্সে একটু ভাটা পরিলক্ষিত হলেও সীমিত ওভারের ফরম্যাটে ফাস্ট বোলিং সহায়ক পিচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সেঞ্চুরি করে তার প্রমাণই দিয়েছেন রিয়াদ। একইভাবে এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে আয়ারল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবার সেঞ্চুরি বেরিয়ে এসেছে তার ব্যাট থেকে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় মাহমুদউল্লাহ ভাল করতে পারেন, এই চিন্তায় তাকে আবার টেস্ট দলে ফেরানোর কথা ভাবা হচ্ছে। রিয়াদ দলে থাকলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না। এদিকে রিয়াদ দলে আসেন না নাই আসুন, নাসির হোসেন বাদ এটা এক প্রকার নিশ্চিত।
কারণ, দু’বছর পর টেস্টে ফিরে চট্টগ্রামে সুবিধা করতে পারেননি নাসির। কোচ, টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচক- কারোরই মন জয় করতে না পারায় তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট দলে জায়গা পাবার সম্ভাবনা গেছে কমে। বাড়তি পেসারের অন্তর্ভূক্তিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই বাদ পড়বেন আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও।
তাহলে দলটা কেমন দাড়ালো? একটু মিলিয়ে নিন তো!
তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহীম (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, লিটন দাস/নুরুল হাসান সোহান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শফিউল ইসলাম, রুবেল হোসেন ও কামরুল ইসলাম রাব্বি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ