চট্টগ্রাম টেস্টে ৭২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে গেছে বাংলাদেশ। একে একে সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান ও নাসির হোসেন ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলে টাইগারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে অস্ট্রেলিয়া। লিড ৫০ পার হতেই ৭ উইকেট হারিয়ে হারের শঙ্কার মুখে পড়েছে স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই সৌম্যকে হারানোর পর তামিম-ইমরুল জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। তবে পরপর এই দুজনের বিদায়ে বেশ চাপের মুখে পড়েছে স্বাগতিকরা। এরপর সাকিব ও নাসির ফিরে গেলে ৫ উইকেটে ৪৩ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশের ইনিংস। বিপর্যয়ের মুখে ৫৪ রানের জুটি গড়েন মুশফিক ও সাব্বির। তবে লাঞ্চের বিরতির পর সাব্বির ও মুশফিকের বিদায়ে পরাজয় চোখ রাঙানি দিচ্ছে টাইগারদের।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১২৯ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ ০ মুমিনুল ১৯ রান নিয়ে ব্যাট করছেন। মুশফিক ৩১ রান করে আউট হন। সাব্বির ফিরেছেন ২৪ রান করে। সৌম্য ৯, তামিম ১২, ইমরুল ১৫, সাকিব ২ ও নাসির রান করে।
প্যাট কামিন্সের করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে স্লিপে ম্যাট রেনশকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য। তার বিদায়ের পর ক্রিজে তামিম ইকবালের সঙ্গে যোগ দেন ইমরুল কায়েস। মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংসেই হাফসেঞ্চুরি করা তামিম চট্টগ্রামের দুই ইনিংসেই ব্যর্থতার পরিচয় দেন। নাথান লায়নের করা ১৩তম ওভারের শেষ বলে ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে বিগ শট খেলতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তামিম। এর কিছুক্ষণ পর ফের বাংলাদেশ শিবিরে হানা দেন লায়ন। তার বলে এক্সট্রা কভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ‘ক্যাচ অনুশীলন’ করিয়ে সাজঘরে ফেরেন ইমরুল।
তিন নম্বরে মুমিনুল হকের জায়গায় নেমেছেন নাসির। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনের জন্যই হয়তো এটা করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে সেই টোটকা কাজে লাগেনি। লায়নের করা ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ওয়ার্নারকে ক্যাচ দিয়ে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে সাজঘরে ফেরেন সাকিব।
স্টিভ ও’কিফের করা ২০তম ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে স্টিভেন স্মিথকে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে সাজঘরে ফিরে সেই চাপ আরো বাড়িয়ে দেন নাসির। এরপর মুশফিক-সাব্বিরের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশ। তবে লাঞ্চের পর লায়নের নিচু হওয়া বলে ডাউন দ্য ট্র্যাকে খেলতে এসে সাব্বির স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরলে চাপের মুখেই থাকে টাইগাররা। কিছুক্ষণ পর কামিন্সের বলে উইকেটের পেছনে ম্যাথু ওয়েডকে ক্যাচ দিয়ে মুশফিক ফিরে গেলে হারের শঙ্কা চেপে ধরে বাংলাদেশকে।
প্রথম ইনিংসে ৩০৫ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার ৯ উইকেটে ৩৭৭ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া। দিনের দ্বিতীয় ওভারে নাথান লায়নকে আউট করে বাংলাদেশের মুখে হাসি ফোটান মোস্তাফিজ। ৭২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।
ডেভিড ওয়ার্নার, পিটার হ্যান্ডসকম্ব ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা বুধবার তৃতীয় দিন যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন তাতে করে বাংলাদেশ শিবিরে হতাশা নেমে আসছিল। একসময় ৩ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার ২৯৮ রান করে ফেলেছিল। ক্রিজে সেঞ্চুরিয়ান ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে ছিলেন দারুণ খেলতে থাকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ১৫০ থেকে ২০০ রানের লিড অস্ট্রেলিয়ার নাগালের মধ্যেই ছিল। কিন্তু এরপরই দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজের বোলিং নৈপুণ্যে অজিদের লিড লাগামের বাইরে যেতে দেয়নি টাইগাররা।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ার্নার ১২৩ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন। ষষ্ঠ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে এশিয়ার মাটিতে ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন এই বাঁহাতি ওপেনার। এছাড়া সফরকারীদের হয়ে পিটার হ্যান্ডসকম্ব ৮২, স্টিভেন স্মিথ ৫৮ এবং ম্যাক্সওয়েল করেন ৩৮ রান। অ্যাস্টন অ্যাগার ২২ এবং হিলটন কার্টরাইট করেন ১৮ রান।
বাংলাদেশের হয়ে মোস্তাফিজ সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন। মেহেদী হাসান মিরাজ পান তিনটি উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন সাকিব ও তাইজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস