মিরপুরের ‘কমল প্রভা’ নামের বাড়িটির ভেতরে থাকা জঙ্গি আস্তানা থেকে দগ্ধ তিনজনের লাশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলেছেন, ‘লাশগুলো দগ্ধ হওয়ায় পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে গতকাল রাতের বিস্ফোরণে কোনও একসময় তাদের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের অভিযান চলছে।’ বুধবার (০৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দারুস সালাম থানাধীন বর্ধন বাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় উদ্ধার কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সকালে ওই ভবনে তল্লাশি করে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে এক ব্রিফিংয়ে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানান, তাদের ধারণা ওই ‘জঙ্গি আস্তানায়’ নারী-শিশুসহ ৭ জন আছে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বাড়িটির ভেতরে গুলির শব্দ পাওয়া যায়।
জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে থাকাতে বলা হয়েছে। আস্তানা সংলগ্ন এলাকায় কড়া অবস্থানে রয়েছে র্যাব। গাবতলীর দিক থেকে ওই এলাকায় যাওয়ার পথও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘সোমবার রাতে টাঙ্গাইলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে দারুস সালামের এই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হচ্ছে। বাড়িটির পঞ্চম তলায় সন্দেহভাজন জঙ্গিরা অবস্থান করছে।’
বাড়িটির ২৪টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৩টি থেকে পুরুষ-নারী-শিশুসহ ৬৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বাড়িটির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।
জঙ্গি আস্তানা থেকে আবদুল্লাহর বোন ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানান বেনজীর আহমেদ। র্যাবের মহাপরিচালক জানান, তারা আবদুল্লাহকে আত্মসমর্পণ করানোর জন্য ফোনে বারবার যোগাযোগ করছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, তারা আব্দুল্লাহকে আত্মসমর্পণের জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। গত সোমবার রাত ১টা থেকে দারুস সালামের বর্ধন বাড়ি এলাকার ‘কমল প্রভা’ নামের বাড়িটি বাড়িটি ঘেরাও করে অভিযান শুরু করে র্যাব।
র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, বাড়ির ভেতরে আব্দুল্লাহর ২ স্ত্রী, ২ সন্তান থাকার কারণে তাদের ‘মিশন’ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তারা যে ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন সেটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করা হয়েছে। ওই ফ্ল্যাটে শিশু উমর (১১) ও উসামার (২) জন্য মূলত র্যাব অভিযান পরিচালনা করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন মুফতি মাহমুদ খান।
র্যাব-৪ এর সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আউয়াল জানান, জঙ্গি আবদুল্লাহর গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। তার বাবা ইউসুফ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। ওই আস্তানায় আবদুল্লাহর সঙ্গে তার দুই স্ত্রী ফাতেমা ও নাসরিন ছিলেন। ছিল দুই শিশু ওসামা ও ওমর। সঙ্গে আবদুল্লাহর দুই সহযোগীও ছিল। তিনি জানান, আবদুল্লাহর চুয়াডাঙ্গার বাড়ি থেকে তার বোন মেহেরুন্নেসা মেরিনাকে আটক করে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার সকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ও র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ওই এলাকা পরিদর্শন করেন।
জঙ্গি আস্তানাটি ঘিরে রাখার প্রায় ২৪ ঘণ্টার মাথায় গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বাড়িটিতে পরপর তিনটি বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়। বাড়ি থেকে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হয়।
বিস্ফোরণের পরে র্যাবের কর্মকর্তারা বলেন, বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিরা নিজেরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।
এক প্রবাসীর মালিকানাধীন ছয়তলা বাড়িটির ২৪টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৩টি ফ্ল্যাটের ৬৫ জন বাসিন্দাকে সোমবার রাতেই সরিয়ে নেয় র্যাব।
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ভেতরে বিপুল পরিমাণ এসিড, পেট্রোল ও ৫০টি আইডি রয়েছে। ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে ভবনটিতে বসবাস করছেন। ফ্রিজ, টেলিভিশন মেরামত ও আইপিএস তৈরির পাশাপাশি জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে তিনি জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত বলেও জানান র্যাবের ডিজি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস