কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে সীমান্ত পথে বৈধ ও অবৈধ উভয় পথেই গরু আসছে। ভারতীয় সীমান্তের ৯৬টি পথ দিয়ে গরু আনার ব্যাপারে আগের কঠোর অবস্থান শিথিল করেছে বিএসএফ। চলতি মাসের ২০ দিনেই বিভিন্ন সীমান্ত পথে প্রায় এক লাখ গরু ঢুকেছে। কোরবানির ঈদের আগে গরু আমদানি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন সীমান্তের গরু বেপারীরা।
গতবারের চেয়ে এবার ভারত থেকে বেশি গরু আসায় গরুর দাম মানুষের সাধ্যের মধ্যেই থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে দেশি খামারিদের বাড়তি মুনাফা করার বাসনা ভেস্তে যেতে বসেছে।
গরু আমদানিকারকরা বলছেন, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার সীমান্ত পথে এক সপ্তাহ ধরে গরু আসার সংখ্যা বাড়ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বেশি গরু আসছে। এ জেলার সীমান্ত পথে গত ১০ দিনে প্রায় পাঁচ হাজার
গরু এসেছে। এ ছাড়া গত ১৫ দিনে প্রায় ২০ হাজারের বেশি গরু এসেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও নওগাঁ সীমান্ত পথে।
সম্প্রতি বিজিবির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বৈধভাবে গরু এসেছে তিন লাখ ৭৪ হাজার ৯৭৫টি। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৭৭ হাজার ৪৪১টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৯ হাজার ২৭৫টি, মার্চ মাসে ৫০ হাজার ৭০০টি, এপ্রিল মাসে ২৯ হাজার ৩৫৬টি, মে মাসে ৫১ হাজার ২২৬টি এবং জুন মাসে ৯৬ হাজার ৯৭৭টি গরু এসেছে। জুলাই মাসেই গরু এসেছে প্রায় ৪০ হাজার। আর চলতি আগস্ট মাসের দুই সপ্তাহে বৈধ ও অবৈধ পথে প্রায় ৩০ হাজার গরু ঢুকেছে।
মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান থেকেও প্রতিদিন গরু আসছে। নেপাল এবং ভুটানের গরু আসছে ভারত ঘুরে। মিয়ানমারের গরু আসছে কক্সবাজার এবং বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে। গরু বেপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামের বিভিন্ন অংশে গরু জড়ো করছেন। রাতের অন্ধকারে এসব গরু দেশে ঢুকছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্তের ৩১টি করিডোর এলাকায় সেখানকার ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় গরু এনে জড়ো করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ :জেলার শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে প্রচুর গরু আসছে। উপজেলার অহেদপুর ও রঘুনাথপুর সীমান্তে সরকার অনুমোদিত দুটি বিট/খাটাল দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার গরু আসছে। প্রতিদিন এই দুটি বিট দিয়ে গড়ে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার গরু আসছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৬ সালে কোরবানির ঈদের আগে জুলাই ও আগস্ট মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ১২ হাজার ৭৯৮টি গরু এসেছিল। অথচ এ বছর শুধু জুলাই মাসেই গরু এসেছে ৬৮ হাজার ৫০১টি। শিবগঞ্জ উপজেলার অহেদপুর বিটের পরিচালক মনিরুল ইসলাম কালু জানান, দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গরু আসছে। ঈদের আগের দিনগুলোতে গরু আমদানির পরিমাণ আরও বাড়বে।
সাতক্ষীরা :সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, দেবহাটা ও কালীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় গরু প্রবেশ করছে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিনশ\’ ভারতীয় গরু সাতক্ষীরার সীমান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। তবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। গরুপ্রতি ৫০০ টাকা সরকারি রাজস্ব আদায় করার কথা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে গরুপ্রতি ৪ হাজার ২০০ টাকা করে।
সাতক্ষীরা কাস্টমস অফিসের কর্মকর্তা আবদুল লতিফ জানান, সাতক্ষীরার কুলিয়া, সোনাবাড়িয়া, সাতানি ও বসন্তপুর_ এই চারটি করিডোর দিয়ে ভারতীয় গরু ঢুকছে। ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা সীমান্তে ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজি হচ্ছে। গরুপ্রতি সরকারি কোষাগারে ৫শ\’ টাকা নেওয়ার কথা। অথচ গরুপ্রতি চাঁদা দিতে হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, ২২ আগস্ট ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসপি