মিরপুরে আরেকটি রূপকথার জন্ম হবে?

আজ মিরপুরে কি আরেকটি রূপকথার জন্ম হবে? জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার চাই ১৫৬ রান; বাংলাদেশের ৮ উইকেট। মিরপুরের স্পিনবান্ধব উইকেটের যা অবস্থা, তাতে যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ দলের ওপেনার তামিম ইকবাল জানালেন, এ উইকেটটা ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। ভালো জায়গায় বোলিং করলে উইকেট পাওয়া যাবে সহজেই। তবে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্যটাও খুব বেশি নয়। গত অক্টোবরে মিরপুরের উইকেটে ইংল্যান্ডকে ২৭৩ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। মিরাজের ঘূর্ণিতে ল-ভ- হয়ে গিয়েছিল তারা। ১৬৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল তাদের ইনিংস। বাংলাদেশ পেয়েছিল ঐতিহাসিক জয়ের দেখা।

এ টাটকা সুখস্মৃতি সামনে রেখে আজ এগিয়ে যাওয়ার পালা বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নতুন ইতিহাস গড়ার সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু এ কাজটা অত সহজ নয়। গতকাল শেষ বিকালে নতুন ‘জীবন’ পেয়ে যেভাবে ওয়ার্নার-স্মিথ ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখালেন, তাতে অস্ট্রেলিয়ার জয়টা প্রত্যাশিত মনে হতেই পারে।

বাংলাদেশের দেওয়া ২৬৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই নড়েবড়ে হয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণিতে বেসামাল হয়ে দ্রুত উইকেট হারিয়েছেন ওপেনার রেনশ ও উসমান খাজা। ওয়ার্নারের ক্যাচ সৌম্য সরকার এবং স্মিথের ক্যাচটি ইমরুল কায়েস মিস না করলে শেষ বিকালে হাসিমুখ নিয়েই ড্রেসিংরুমের ফিরতে পারতেন টাইগাররা। ‘জীবন’ পাওয়া ওয়ার্নার অপরাজিত ৭৫ ও স্মিথ ২৫ রান তুলে উইকেট ধরে রেখে আশা জাগিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার। দিনশেষে তাদের সংগ্রহ ১০৯/২।

দ্বিতীয় ইনিংসে প্রত্যাশিত স্কোর গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। যে পুঁজি নিয়ে লড়ছে টাইগাররা, তাতে সবচেয়ে বড় অবদান তামিম ইকবালের। আগের দিন ৩০ রানে অপরাজিত থাকা তামিম ব্যাটিং চালিয়ে যাচ্ছিলেন স্বমহিমায়। কামিন্সের বল সীমানাছাড়া করে দিনের শুরুটা করেন। বল সীমানাছাড়া করে হাফ সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন বাংলাদেশের সেরা এ ওপেনার। এতে তামিমের অনেক রেকর্ডের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হয়েছে। নিজের ৫০তম টেস্টে দুই ইনিংসেই তামিম পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলে গড়েছেন আরেকটি রেকর্ড। সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশারের মতো ৬ বার এক টেস্টে জোড়া হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন তামিম। প্রথম ইনিংসে ৭১, গতকাল খেলেছেন ৭৮ রানের ইনিংস। মজার ব্যাপার হলো ক্যারিয়ারে তামিমের মতো ৫০টি টেস্ট খেলে এমন কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন বাশার। বাশারের সমান ২৪টি হাফ সেঞ্চুরি এখন তামিমেরও। কিন্তু টেস্টে বাশারের ৩টি সেঞ্চুরির বিপরীতে তামিমের আটটি। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডটি তামিমের দখলেই। টেস্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তামিম। ২০০৮ সালে ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই জোড়া হাফ সেঞ্চুরি করে যাত্রা শুরু হয়েছিল।

প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার আগে আবহাওয়া নিয়ে বেশ শঙ্কা ছিল। প্রথম দিন বৃষ্টি কিছুটা বাগড়া দিলেও পরে টানা দুই দিন নির্বিঘ্নে খেলা হয়েছে। মিরপুরে রোদ ঝলমলে সুন্দর দিনে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটাও হয়েছিল মনের মতো। চার মেরে দিনের শুরুটা করেন তামিম। কামিন্সের প্রথম ওভারে ৮ রান তুলে বড় ইনিংস খেলার ইঙ্গিত দেন এই ওপেনার। কামিন্সের দ্বিতীয় ওভারে চার মেরেই বাংলাদেশের লিড তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছে দেন। অ্যাস্টন আগারের বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক এই ব্যাটসম্যান।

দিনের অষ্টম ওভারে লায়নের বলে প্রথম উইকেট হারান আগের দিন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাটিংয়ে নামা তাইজুল। লায়নের বলে ইমরুল কায়েস ক্যাচ দেওয়ার পরও প্রথম সেশনে দাপুটে খেলে ১৭৬ রানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। তামিম-মুশফিক দারুণ ব্যাটিং করেন। কিন্তু লাঞ্চ-বিরতির পর তামিম-সাকিবের গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট হারিয়ে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। সেঞ্চুরির পথে থাকায় তামিম শেষ পর্যন্ত কামিন্সের এক দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ধরা পড়েন। ২১৫ মিনিট উইকেটে স্থায়ী ছিলেন তামিম। মুশফিকের সঙ্গে ৮৩ মিনিট উইকেটে কাটিয়ে ৬৮ রানের জুটি গড়েন এ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। এ জুটিতেই লড়াকু পুঁজির দিকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম দুই দিন ব্যাট-বলে নৈপুণ্য দেখিয়ে যাওয়া সাকিব গতকাল ব্যাট হাতে ছিলেন নিষ্প্রভ। লায়নের বলে আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে ক্যাচ উঠিয়ে দেন। এর পর সাব্বির রহমানকে নিয়ে লড়ে যান মুশফিক। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৪৩ রান তোলেন তারা। পর পর ওভারে মুশফিক, সাব্বির ও নাসির উইকেট হারানোর পর চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।

অপ্রত্যাশিত রানআউটের শিকার হন দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিক। লায়নের বলে স্ট্রেট ড্রাইভ করেন সাব্বির। বলে হাত ছুঁয়ে দেন লায়ন। উইকেট ছেড়ে দাঁড়ানোয় পরিষ্কার আউট হন মুশফিক। আগারের বলে উইকেটরক্ষকের হতে ক্যাচ দিয়ে কোনো রান না করেই সাজঘরে ফেরেন নাসির। অ্যাম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হন সাব্বির। দলীয় ১৮৬ রানে ৮ উইকেট হারানো বাংলাদেশ কি অস্ট্রেলিয়াকে আড়াইশ রানের লক্ষ্য দিতে পারবে এমন শঙ্কা জাগলেও ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ান মিরাজ। তার ২৬ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংসে ২৬৪ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। চা বিরতির পর মাত্র ১৯ মিনিটেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। পৌনে ৬ ঘণ্টা স্থায়ী হওয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়েছে ২২১ রানে। ৪৩ রানের লিড যোগ করে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়াকে লড়াকু ২৬৫ লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ।

সিরিজের আগেই স্পিনার নাথান লায়নকে নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট শিকার করা লায়ন গতকাল একাই ধসিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। ৮২ রান দিয়ে শিকার করলেন ৬ উইকেট। লায়নের দারুণ স্পিনেই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াল অস্ট্রেলিয়া। আজ অস্ট্রেলিয়ার জয় নাকি বাংলাদেশের ইতিহাস সময়ের অপেক্ষা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, ৩০ আগস্ট ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসপি

Scroll to Top