ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার অর্থনীতি-বিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে গেল মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। এর পরদিন অর্থাৎ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) টিউলিপকে নিয়ে এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক, দিয়েছেন বার্তা। কিন্তু তার এই পোস্ট শেয়ারের কারণ কী?
এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে, টিউলিপ সিদ্দিককে হয়তো ব্যক্তিগতভাবেই চেনেন ইলন মাস্ক। কিন্তু আসলেই বিষয়টি এমন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, টিউলিপকে না চিনলে বা পরিচয় না থাকলে তাকে নিয়ে কেন পোস্ট দিলেন মাস্ক?
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম বিশেষ করে ব্রিটিশ কিছু গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক অনেক প্রতিবেদন মতে, যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে ইলন মাস্কের ‘হস্তক্ষেপ’ সংক্রান্ত বিষয়ে তার সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। এমনকি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গেও তার সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে বলে মনে করা হয়। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনাও।
এমন প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছে, চলমান এই পরিস্থিতির কারণেই দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে টিউলিপের পদত্যাগের ঘটনাটি সামনে এনে ব্রিটিশ সরকারকে ‘খোঁচা’ দিয়েছেন ইলন মাস্ক।
ইংল্যান্ডের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে বছরের শুরু থেকেই। যার পেছনে বড় কারণ শিশু নির্যাতনকারী ‘গ্রুমিং গ্যাং’। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর, অভিযুক্তদের অধিকাংশই পাক-বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। মূলত এই ইস্যু নিয়েই সরব হয়েছিলেন মাস্ক।
কনজারভেটিভ দলের পাশাপাশি লেবার পার্টির সমালোচনাও শুরু করেন তিনি। দাবি করেন, ‘ধর্ষকদের দলে’র বাড়বাড়ন্তের নেপথ্যে কিয়ার স্টারমারের ‘অপদার্থতা’।
জনমত জরিপের তথ্যের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, ইলন মাস্ক বর্তমানে ‘ব্রিটেনে গভীরভাবে অজনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব’ এবং তার সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল (এক্স) দেশটিতে ব্যাপক হারে ব্যবহারকারী হারিয়েছে।
লন্ডন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ব্রিটিশ ফিউচারের পরিচালক সুন্দর কাটওয়ালা বলেন, ‘ব্রিটিশ রাজনীতি এবং মিডিয়ায় আলোচনার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে ইলন মাস্কের রাজনীতি সংক্রান্ত পোস্টগুলো।’
তবে বাজার গবেষণা সংস্থা ইউগভের তথ্যানুসারে (সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে), ইলন মাস্ককে ব্রিটেনের মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ ‘অনুকূলভাবে’ দেখেন। যখন তাকে ‘প্রতিকূলভাবে’ দেখেন ৭১ শতাংশ মানুষ।
টিউলিপকে নিয়ে কী লিখেছেন?
মন্ত্রী হিসেবে যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। তাই দুর্নীতির অভিযোগে তার পদত্যাগের খবরটি সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনা–সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। টিউলিপের পদত্যাগ-বিষয়ক একটি এক্স পোস্ট শেয়ার করেছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের মালিক ইলন মাস্ক।
পোস্ট শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, যুক্তরাজ্যের শিশুকল্যাণের দায়িত্বে থাকা লেবার পার্টির মন্ত্রী নির্যাতনকারীদের সুরক্ষা দেন। আর তাদের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী নিজেই একজন দুর্নীতিবাজ।
যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক সিটি মিনিস্টার ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। মন্ত্রী হিসেবে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক।
কিন্তু তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ ওঠে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট এবং বাংলাদেশে রাশিয়ার সহায়তায় নির্মাণাধীন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করেছিলেন।
এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছিল। পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে পদত্যাগের চাপ বাড়ছিল। নানামুখী চাপের মুখে অবশেষে পদত্যাগের ঘোষণা দেন টিউলিপ।