আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ হলেই তৃপ্ত থাকতে চান নীতি নির্ধারকরা। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট হতে পারে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে। এমন লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে এরই মধ্যে নতুন অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেট যেন আগের মতো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী না হয়; এতে যেন গুরুত্ব পায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য।
আর্থিক খাত সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা উদ্যোগ আশার আলো দেখালেও কোনোভাবেই যেন বাগে আসছে না লাগামহীন মূল্যস্ফীতি। চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ মাস পরও তা চড়ে আছে এগারোর কাছাকাছি।
উচ্চাভিলাষ থেকে সরে খানিকটা সাবধানি বাজেট দেয়া হলেও চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৬.৮ শতাংশ। যদিও এর প্রায় বিপরীত চিত্র আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাসে। গত অক্টোবরে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির পরিমাণ সাড়ে চার শতাংশ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দাতা সংস্থাটি।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও গত ৬ মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার কোটি টাকা। আর ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করতে পেরেছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৫ কোটি টাকা। এই রাজস্ব আদায় বাড়াতেই গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট-শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার।
এ অবস্থার মধ্যেই চলছে নতুন বাজেট তৈরির কাজ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এবার বাজেটের আকার হতে পারে সাড়ে ৮ লাখ কোটি টাকা। ৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতির বিপরীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হতে পারে সাড়ে ৫ শতাংশ।
তবে বাজেট যেন গতানুগতিক রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী না হয় সেদিকে নজর দেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ বলেন, ৮ লাখ ৫০ হাজার কোটির টাকার বাজেট হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এটি সত্যি হলে সরকার ইনক্রিমেন্টাল বাজেটের দিকেই এগোবে। আর সেটি হলে একই স্ট্রাকচারে এগোবে সরকার। তা হলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সেভাবে সম্ভব হবে না।
অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ আরও বলেন, কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেয়ার সুযোগ নেই এখন। তাই বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিক প্রকল্প নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে একটি যথার্থ বাজেট দিতে হবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, আর্থিক খাতে নানা ধরনের সংস্কার কাজ চলছে। পাশাপাশি নানা রকম চাপও রয়েছে অর্থনীতিতে। ফলে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের আকার ৮ লাখ কোটি টাকার ওপরে রাখা ঠিক হবে না।
চলমান সংস্কারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাজেটের আকার বাড়ানোর চেয়ে বিনিয়োগ আর কর্মসংস্থান ঘিরে পরিকল্পনা সাজানোরও পরামর্শও দিচ্ছেন তারা। ড. মাহফুজ কবির বলেন, বাজেটে ব্যয়ের আকার না বাড়িয়ে বরং কীভাবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো যায় ও মূল্যস্ফীতি কমানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।
সংসদ না থাকায় আগামী জুনে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে ঘোষণা হবে আসছে বাজেট।