আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় আদালতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছেন আসামিরা। এসময় হট্টগোল সৃষ্টি হয়। ঘটনার সময় আসামিদের পাশে থাকা এক যুবককে মারধর করার অভিযোগ ওঠেছে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে এমনই ঘটনা ঘটেছে নেত্রকোনা জজ আদালতে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার খালিয়াজুরি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গত ২০ সেপ্টেম্বর নাশকতা আইনে একটি মামলা হয়। ওই মামলাটির বাদী খালিয়াজুরির মাইনুল ইসলাম তালুকদার এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর সঙ্ঘবদ্ধ আসামিরা উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর করেন। ওই ঘটনায় তিনি ৪৮ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০ জনকে আসামি করেন। পরে উচ্চ আদালত থেকে ২৮ দিনের জামিন পান আসামিরা।
জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে নাম উল্লেখ করা ৪৩ জন আসামি জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। এসময় বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. হাফিজুর রহমান অসুস্থ একজন আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। আর জেলার খালিয়াজুরি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শামসুজ্জামান তালুকদার শোয়েব, খালিয়াজুরি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম আবু ইসহাক, তার ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম ফালাক, চাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, মেন্দিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হেকিম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক স্বাগত সরকারসহ অন্তত ৪২ জন আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিরা দোতলায় এজলাস কক্ষ থেকে বের হয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় বেশ কয়েকজন ফোনে তাদের স্লোগানের ভিডিও ধারণ করেন। পরে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১ মিনিট ১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, আসামিরা উচ্চস্বরে স্লোগান দিচ্ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন আইনজীবী জাগো নিউজকে জানান, স্লোগান দেওয়ার সময় আসামিদের সঙ্গে থাকা আকাশ মিয়া নামের এক যুবককে বেশ কয়েকজন মারধর করে তার শরীরের জামা ছিঁড়ে ফেলেন। এসময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পরে বিএনপি সমর্থিত বেশ কয়েকজন আইনজীবী এসে ওই তরুণকে উদ্ধার করে একটি কক্ষে রাখেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোট পরিদর্শক মফিজ উদ্দিন শেখের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
তবে নেত্রকোনা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এজলাস থেকে বের হয়ে বেশ কয়েকজন আসামি স্লোগানটি দিতে থাকেন। এসময় একটু হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তবে যুবককে মারধর করার বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। এরকম কিছু হয়ে থাকলে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।