বাংলাদেশিদের জন্য ভারত ভিসা বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে যে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে সে বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অপপ্রচারের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে যে অপপ্রচার হচ্ছে সে বিষয়ে ভারত সরকার দায়ী না। এটি বিভিন্ন সংগঠনের কাজ।’
তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে বসে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য ও বিবৃতির বিষয়েও সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে এবং জোরদার করতে ভারত ইচ্ছা পোষণ করেছে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে যে বিপ্লব হয়েছে সেটি সম্পর্কে ভারত অবগত রয়েছে।
এদিকে বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব জসিম উদ্দিন বলেন, ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান ও বিভিন্ন সময় দেয়া বক্তব্য বাংলাদেশ পছন্দ করছে না, এমন বার্তা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটা সরকার পছন্দ করছে না বলে জানানো হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবকে। উত্তরে বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার অবস্থান দুই দেশের সম্পর্কে বাধা হওয়া উচিত নয়।
সংখ্যালঘু নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘু বিষয়ে আমরা বলেছি তাদের কোনো সংশয় থাকলে তারা আমাদের দেশে এসে সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনে ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলা ও নানা ধরনের হুমকির বিষয়ে জোরালোভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া বৈঠকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুই দেশকে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বৈঠকে সীমান্তে হত্যা শূণ্যে নামিয়ে আনার বিষয়েও কথা হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব।
এদিকে ৫ আগস্টের পর ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া এক ধরনের বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন বিষয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে। জসিম উদ্দিন বলেন, চিকিৎসাপ্রার্থীদের ভিসা সহজ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের সহায়তা কামনা করা হয়েছে। দেশটিতে আটক বাংলাদেশি জেলে ও অন্যান্য নাগরিককে ফেরত দেয়ারও আহবান জানানো হয়েছে।
সকালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। ঢাকায় এসে তিনি প্রথমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটে বিক্রম মিশ্রি যমুনায় যান প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এই প্রথম দিল্লির উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা ঢাকায় এলেন। আর পররাষ্ট্রসচিব হওয়ার পর মিশ্রির প্রথম ঢাকা সফরও এটি। আজ রাতেই বিক্রম মিশ্রির দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।