বিদেশি বায়াররা চট্টগ্রামমুখী হওয়ায় আবারো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে তৈরি পোশাক শিল্প। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসেবে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) অন্তর্ভুক্ত গার্মেন্টসগুলো ৫৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। এছাড়া, এ সময়ে তিনটি ইপিজেডের পাশাপাশি নিট শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) রফতানির পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বেশি।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক শিল্পের পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। অথচ এর পুরো বিপরীত চিত্র বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। এখন পর্যন্ত এখানকার পোশাক কারখানায় অস্থিরতা একেবারে শূন্যের কোটায়। পুরোদমে উৎপাদনে রয়েছে চট্টগ্রামের ৪৪৬টি তৈরি পোশাক কারখানা। আর তাই বিদেশি বায়াররা এখন চট্টগ্রামমুখী।
চট্টগ্রামের ক্লিফটন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, এখানে কোনো শ্রমিক অস্থিরতা নেই। পোশাক কারখানাগুলো সময়মতোই পণ্য রফতানি করতে পারছে।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চট্টগ্রাম থেকেই রফতানি হয়েছে ৫৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। জুলাই মাসে ৭.৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসেবে ১০৬ মিলিয়ন ডলার, আগস্ট মাসে ৫৫.৯৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসেবে ১৬৬ মিলিয়ন ডলার পণ্য রফতানি হয়েছে। বন্যার কারণে সেপ্টেম্বর মাসে ২০ শতাংশ কম হলেও আর্থিক পরিমাণ ছিল ১৩২ মিলিয়ন ডলার।
তবে অক্টোবরে আবারও ৪.১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসেবে ১৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামের আরডিএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফা সারোয়ার রিয়াদ বলেন, ঢাকায় অস্থিরতা থাকায় বিদেশি ক্রেতারা চট্টগ্রামের পোশাক কারখানাগুলোর দিকে ঝুঁকছে।
চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড এবং কোরিয়ান ইপিজেডের পাশাপাশি বিকেএমইএর অন্তর্ভুক্ত কারখানাগুলোতেও ক্রমশ বাড়ছে বিদেশি বায়ারদের অর্ডার। অথচ ঢাকাভিত্তিক কারখানাগুলোর জুলাইয়ে ১৭.৫৬ শতাংশ এবং আগস্টে ২৯.৭৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হলেও সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে তা একেবারেই কমে গেছে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ ও পরিবেশ উৎপাদন ও শিল্পবান্ধব, যা বার বার প্রমাণিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, তৈরি পোশাকখাতে মোট রফতানি আয়ের ৯ থেকে ১০ শতাংশ ভূমিকা রাখছে চট্টগ্রামের ইপিজেড, বিজিএমই ও বিকেএমইএর গার্মেন্টস কারখানাগুলো। অবশ্য এক দশক আগেও এ হার ছিল ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। আর এখানে শ্রমিক রয়েছেন ৭ লাখের বেশি।