‘মৃত ভেবে আমাকে তোলা হয় লাশের ট্রাকে’

ভয়াল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৩তম বার্ষিকী আজ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সময় আইভি রহমানের পাশেই ছিলেন নাসিমা ফেরদৌসী। শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। এতে আইভি রহমানসহ অনেকের প্রাণ মুহূর্তেই ঝরে যায়। অনেকেই গুরুতর আহত হন। তাদেরই একজন নাসিমা ফেরদৌসী।

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নাসিমা ফেরদৌসী বলেন, ‘মনে হয় প্রতিটি শ্বাস-নিঃশ্বাসে শরীরে বিদ্ধ হাজারো স্পিন্টার যন্ত্রণা দিচ্ছে। এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর এ যন্ত্রণা নিয়ে কাটছে আমার জীবন। এ যন্ত্রণা আমাকে প্রতিদিনই ২১ আগস্টের দুঃসহ স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। প্রতিরাতেই শরীরের ব্যথায় ঘুমাতে পারি না।’

সেই দুঃসহ স্মৃতি মনে করে অশ্রুসজল হয়ে নাসিমা ফেরদৌসী বলেন, গ্রেনেড হামলা শুরু হয় যখন, তখন আমার ডান পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাম পাশে আইভি আপা ছিলেন। কোথাও যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছিল যেন চারদিকে আগুনের ফুলকি। এরই মধ্যে আমি টের পেয়ে যাই, আমার শরীর জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে। আমি, আইভি আপা ও সাবেক মেয়র হানিফ ভাইসহ বেশ কয়েক নেতা জড়িয়ে ধরি নেত্রীকে (শেখ হাসিনা)। এ সময় মনে হয়েছে, আমার পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। শরীর থেকে ঝরছে রক্ত। চারদিকে তাকিয়ে দেখি, সবারই একই অবস্থা। এরপর কখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলি, খেয়াল নেই। আমি যখন অজ্ঞান, তখন মৃত ভেবে আমাকে তোলা হয় লাশের ট্রাকে; কিন্তু নড়েচড়ে ওঠার পর পুলিশ আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফেলে রাখা হয় হাসপাতালের করিডরে। এক সাংবাদিক এসে আমার কাছে আত্মীয়স্বজনের মোবাইল নম্বর চাইলেন। ছেলের মোবাইল নম্বর দেওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। এরপর আর কিছুই মনে ছিল না আমার। এরপর আর ওই সাংবাদিকের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ হয়নি। তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আজও আমি সেই সাংবাদিককে খুঁজে বেড়াই। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ, তার প্রচেষ্টায় আমি আজ পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছি। মরার আগে যদি গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার দেখে যেতে পারতাম, তাহলে মরেও শান্তি পেতাম।

নাসিমা ফেরদৌসী আরও বলেন, দুই পা বিকল হয়ে যাওয়ায় চার বছর শয্যাশায়ী ছিলাম আমি। চার মাস সারা শরীরে স্পঞ্জ লাগানো ছিল। এরপর হুইলচেয়ার, স্ট্রেচার ও ওয়াকারের মাধ্যমে হাঁটা শেখানো হয়। দীর্ঘ ৮ বছর নিজের পায়ে হাঁটতে পারিনি। ৮ বছর পর লাঠির সাহায্য নিয়ে হাঁটতে হয়েছে। এখনো স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারছি না। এত যন্ত্রণা, এত কষ্ট, হাঁটতে কষ্ট, শুতে কষ্ট! এত অশান্তির মাঝেও সান্তনা এই যে, আমি বেঁচে আছি। মারা গেলে আজ অনেক বছর হতো, পৃথিবীর আলো-বাতাস আর দেখতে পেতাম না।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, ২১ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ

Scroll to Top