সৌদিতে বন্দি সিলেটের একই পরিবারের ১০ যুবক, মা-বাবাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ

একটু সচ্ছলতার আশায় ঋণ করে ও জমি বিক্রির টাকা দিয়ে ১০ ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিল পরিবার। কিন্তু মিছিলে থাকার অভিযোগে আটকের পর গত ৫ মাস যাবত সৌদির থানা হাজতে বন্দি রয়েছেন তারা। বন্দিদশার কারণে দেশে টাকা পাঠানোও বন্ধ রয়েছে। ছেলেদের চিন্তায় দেশে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তাদের মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। তাদের মুক্তির জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছে পরিবার।

সিলেট সদর উপজেলার ইসলামগঞ্জ বাজার কালারুকা গ্রামের একই পরিবারের এই ১০ ছেলে বিদেশে পাড়ি দেয়ার পর পরিবারের কিছুটা সচ্ছলতা ফিরতে শুরু করে। কিন্তু তাদের সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ২০২১ সাল থেকে দফায় দফায় সৌদি আরবে যান এই ১০ ভাই। কয়েক বছর টাকা পাঠানোর পর তারা আটক হন। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে সৌদি আরবের থানা হাজতে বন্দি রয়েছেন তারা।

বন্দিদশায় থাকা ১০ যুবক একই পরিবারের ৪ ভাইয়ের ছেলে। তারা সবাই সম্পর্কে চাচাতো ভাই। এদের মধ্যে বাবা আব্দুস সাত্তার ও মা তেরাবুনের তিন ছেলে আবদুর রহমান, রিয়াজ উল্লাহ, মোহাম্মদ আলি। আরেক ভাই আব্দুল বাছির ও তার স্ত্রী নবীযানের দুই সন্তান শহিদ ও সাব্বির। আরেক ভাই কাদির ও তার স্ত্রী ফুলতেরার দুই ছেলে নিজাম ও জাহাঙ্গীর এবং আরেক ভাই মর্তুজা আলী ও তার স্ত্রী বেদেনা বেগমের ছেলে সাইদ ও এমজাদ।

তেরাবুন বলেন, ‘আমার চার ছেলের মধ্যে তিন ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছি একটু সচ্ছলতার আশায়। কিন্তু পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা প্রবাসে বন্দি থাকায় চলছে না সংসারের চাকা। একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে আমাদের। ছেলেদের গ্রেফতারের খবর পাওয়ার পর থেকেই তাদের মুক্তির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছি আমরা।’

এই বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার অ্যান্ড কল্যাণ মহাপরিচালক বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেছে পরিবার।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সৌদি আরবের ‘হারা’ নামক স্থান থেকে এই ১০ যুবককে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। হারা নামক স্থানের আশপাশ এলাকায় মিছিল হয়েছিল। সেই মিছিলের সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করাসহ টিকটক ভিডিও ধারণ করেন কোনো এক প্রবাসী। কিন্তু ভিডিও ফুটেজে আটক ১০ যুবকের অস্তিত্ব মেলেনি বলে দাবি পরিবারের।

সঠিক তদন্ত করে তাদের ছেলেদের দ্রুত মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা নিতে বর্তমান সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার লোকমান হোসেন মোবাইল ফোনে সময় সংবাদকে জানান, ‘আবেদনের আলোকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য রিয়াদ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে।’

Scroll to Top