খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ৫ ও ৬ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ড। একই কক্ষে পাশাপাশি শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও সাধারণ অসুস্থতায় ভর্তি রোগীদের।
এই কক্ষের নোংরা বাথরুমের পাশেই ডাবের খোলা, রোগীর ব্যবহৃত কাপড় ও খাবারের প্যাকেট। জানালার নিচে খোলা জায়গায় ডাম্পিং করা হয় ময়লা-আবর্জনা। এখানে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীদের কেউই মশারি ব্যবহার করছেন না। ফলে তাদের কারণেই চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এমনকি রোগীর স্বজনরাও রয়েছেন এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু সংক্রমণ ঝুঁকিতে। জানা যায়, খুলনায় হঠাৎ করেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ১০টি জেলায় নতুন করে ৯৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য দপ্তরে হিসাব অনুযায়ী, খুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৯৯ জন। এর বাইরে বাড়িতে ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও কয়েক শ রোগী। বিভাগে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ১ হাজার ৬৪৩ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ছয়জন। প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বিশ্লেষকরা বলছেন, সচেতনতার অভাবে এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটছে ও সেই সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় মশারি ব্যবহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা না মানায় হাসপাতাল হয়ে উঠছে ‘ডেঙ্গুর হটস্পট’। জন্ডিসজনিত অসুস্থতায় ছেলেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন ইব্রাহিম মিয়া। বললেন, মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা কোনো ডেঙ্গু রোগী সারা দিনে মশারি ব্যবহার করেন না। রাত ১০টার পর মশারি টানানো হলেও সকাল হলে তা খুলে রাখে। হাসপাতালে মশার উৎপাত রয়েছে। ফলে ছেলেকে নিয়ে সারাক্ষণই ডেঙ্গু সংক্রমণ ঝুঁকিতে থাকতে হয়। জানা যায়, খুমেক হাসপাতালে জনবল সংকটে ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা ইউনিট চালু করা যায়নি। ফলে একই কক্ষে পাশাপাশি শয্যায় রেখে ডেঙ্গু রোগী ও অন্য সাধারণ রোগীর চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালের আরএমও ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে ভালো না হওয়া পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা মশারির মধ্যে রাখতে হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত মশারি আছে, যদি এ বিষয়ে কেউ অবহেলা করে অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।